গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেন না। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমার আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি সকল তথ্য জানতে পারবেন। এখানে ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন আশা করি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
এখানে শুধুমাত্র গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে লেখা নেই এর পাশাপাশি ড্রাগন ফল খাওয়ার অপকারিতা, ড্রাগন ফল খাওয়ার সঠিক সময় ও নিয়ম সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

ভূমিকা

লাল-গোলাপি রঙের সুন্দর একটি ফল হলো ড্রাগন। এই ফল দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি খেতেও দারুন সুস্বাদু। এটি মিষ্টি স্বাদের ফল এর অনেক পুষ্টি গুণ রয়েছে। ড্রাগন ফল খেলে আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। যাদের রক্তশূন্যতার সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য ড্রাগন ফল খুবই উপকারী। ড্রাগন ফল খেলে শরীরে রক্ত হয়।

গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা অনেক। ড্রাগন ফল গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারী। ড্রাগন ফলের চাহিদা দিন দিন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই অনেকে এর উৎপাদন বৃদ্ধি করছে। জমিতে, বাড়ির ছাদে চাষ করা হচ্ছে এই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ড্রাগন ফল। ড্রাগন ফলে ভিটামিন বি, আয়রন এবং ফলিক রয়েছে। নবজাতকের জন্মগত ত্রুটি দূর করতে ভিটামিন বি ও ফলিক সহায়তা করে। 

ড্রাগন ফলে ক্যালসিয়াম থাকে যা ভ্রুনের হাড় বিকাশে সহায়তা করে। এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম নারীদের পোষ্ট মনোপজ জটিলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে। ড্রাগন ফল শরীরে ভালো ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে ফলে হজম ক্ষমতা বেড়ে যায়। ড্রাগন ফলে ফাইবার থাকায় এটি পরিপাকতন্ত্রকে ভালো রাখতে সহায়তা করে। ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে এটি রক্তের শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে তাই যাদের ডায়াবেটিস আছে ড্রাগন ফল তাদের জন্য খুবই উপকারী। 

ড্রাগন ফল কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। এটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায় শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। ড্রাগন ফল বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন: ডায়াবেটিস, ক্যান্সার এবং পারকিনসোন এর মত বড় বড় রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। হার্টের রোগীদের জন্য ড্রাগন ফল খুবই উপকারী। 

ড্রাগন ফলে যে ছোট কালো দানা থাকে সেগুলো ওমেগা ৩, ওমেগা ৯ ও ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। ড্রাগন ফল কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ এর ঝুঁকি কমায়। এটি হার্ট ভালো রাখার পাশাপাশি রক্তচাপ ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খেলে তা শিশুর সুস্থ বিকাশের সহায়তা করে।

ড্রাগন ফল খাওয়ার সঠিক সময়

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, ড্রাগন ফল খাওয়ার সঠিক সময় কখন। আমার আলোচনার মাধ্যমে আশা করি জানতে পারবেন ড্রাগন ফল খাওয়ার সঠিক সময় কখন। প্রকৃতিতে বিভিন্ন রকম ফল পাওয়া যায়। কিছু কিছু ফল মিষ্টি স্বাদের আবার কিছু কিছু ফল টক। যেসব ফলে সাইট্রাস এসিড থাকে সেগুলো টক ফল যেমন: জাম্বুরা, পেয়ারা, কমলা, আমড়া, আঙ্গুর ইত্যাদি। 


এসব ফল সকালে নাস্তার পর সকাল ১০ টা থেকে ১১ টার দিকে খাওয়া ভালো। এই সময় এসব ফল খেলে গ্যাস্ট্রিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। আবার যেসব ফল মিষ্টি জাতীয় অর্থাৎ যেসব ফলে ফ্রক্টোজ থাকে সেসব ফল বিকালে খাওয়া ভালো যেমন: আম, কলা, কাঁঠাল, বেদানা ইত্যাদি। 

ড্রাগন ফলেও ফ্রক্টোজ থাকে। ড্রাগন ফল একটি মিষ্টি স্বাদের ফল এবং এর অনেক পুষ্টিগুনও রয়েছে তাই ড্রাগন ফল খাওয়ার সঠিক সময় হল বিকেলে। কেউ যদি ডেজার্ট হিসেবে এই ফল খেতে চায় তাহলে অবশ্যই ভাত খাওয়ার এক ঘন্টা পর খেতে হবে তাহলে হজমের কোন সমস্যা হবে না।

ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম

ড্রাগন ফল বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় একটি ফল। ফলটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি খেতেও সুস্বাদু। এর অনেক পুষ্টিহীন রয়েছে। ড্রাগন ফল দুই রকমের হয়ে থাকে। একটার ভেতরে লাল-গোলাপি রঙের হয় এবং অপরটি সাদা রঙ এর। সাধারণত লাল গোলাপি ফলটাই বেশি বাজারে দেখতে পাওয়া যায়। ড্রাগন ফল কেনার পর এইটা কিভাবে খেতে হয় সেটি অনেকেই জানে না। ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম আজ আমি আপনাদেরকে বলে দেব। 

ড্রাগন ফল কেনার পর এটিকে ভালোভাবে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর একটি ছুরির সাহায্যে ফলের ২ পাশের বোটা কেটে ফেলতে হবে। এরপর ফলের মাঝ বরাবর কেটে হাতের সাহায্যে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে। খোসা ছাড়ানোর পর মনের মত সাইজ করে কেটে নিতে হবে। এই ফলটি খেতে খুব মজা। যারা এখন পর্যন্ত ফলটি খাননি তারা দ্রুত বাজার থেকে কিনে এই ফলটি কেটে খেয়ে ফেলুন।

ড্রাগন ফল কত টাকা কেজি

বর্তমানে ড্রাগন ফলের চাহিদা ব্যাপক। বাজারে দোকানিরা সারি হয়ে বসে থাকেন ড্রাগন ফলের ঝুড়ি নিয়ে। প্রথম যখন ড্রাগন ফল চাষ করা শুরু হয় তখন এই ফলের দ্রব্যমূল্য ছিল অনেক বেশি। তখন প্রতি কেজি ড্রাগন ফল ৫০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো। এই ফলের চাহিদার কারণে বর্তমানে এর উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। 

যার ফলে এই ফলের দাম পূর্বের তুলনায় অনেক কমে গেছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি ড্রাগন ফল ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি ভরে বিক্রি হচ্ছে। তবে যেগুলো দেখতে একটু বেশি সুন্দর এবং বড় সাইজের সেগুলো প্রতি কেজি ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে ফলের দাম কম বেশি হতে পারে।

ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা

ড্রাগন ফল খেতে আমরা প্রায় সকলেই অনেক পছন্দ করি। কিন্তু ফল খাওয়ার পর আমরা এর খোসা ফেলে দেই। অধিকাংশ মানুষই জানে না এই খোসা দিয়ে একটি জাদুকর পানীয় তৈরি করা যায় যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। আজ আমরা ড্রাগন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। 

এই রেসিপিটি তৈরি করার জন্য প্রথমে ড্রাগন ফলের খোসাগুলোকে ভালো করে পানি ‍দিয়ে পরিষ্কার নিতে হবে। এরপর এগুলোকে ছোট ছোট টুকরা করে কেটে নিতে হবে। এরপর একটি পাতিলে পরিমাণ মতো পানি দিয়ে সেই পানিতে বলক ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। পানিতে বলক উঠে গেলে খোসাগুলো পানিতে দিয়ে তিন চার মিনিট ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। 


খোসাগুলো নরম হয়ে আসলে একটা ছাকনির সাহায্যে পানি থেকে খোসা আলাদা করে নিতে হবে। পানিটুকু একটি গ্লাসে ঢেলে তাতে স্বাদমতো লবণ বা বিট লবণ দিতে হবে। এরপর তাতে এক টেবিল চামচ লেবুর রস মিশাতে হবে। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল সেই জাদুকরী পানীয়। এই পানীয় পান করার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এই পানি প্রতিদিন পান করলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমে না ফলে আমাদের শরীর সুস্থ সবল থাকে।

ড্রাগন ফল খাওয়ার অপকারিতা

ড্রাগন ফল খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি অপকারিতাও রয়েছে। আমরা সকলেই জানি ড্রাগন ফলের অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে কিন্তু তারপরও এটি খাওয় সবসময় ভালোনা। ড্রাগন ফল খাওয়ার অপকারিতা নিম্নরূপ:

  • এলার্জি: কিছু কিছু ড্রাগন ফল হয়েছে যেগুলো খেলে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা দেখা দেয়। ত্বক লাল হয়ে যায়,শ্বাস নিতে সমস্যা হয় এবং চোখ জ্বালাপোড়া করে। যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের পরিমাণমতো এই ফল খাওয়া উচিত।
  • পুরুষত্বের সমস্যা: ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে কিছু কিছু পুরুষের সেক্সচুয়াল সমস্যা হয় যার কারণে তাদের যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হয় না।
  • গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা: ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে অনেক সময় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয় ফলে মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব দেখা যায়।
  • পাচনতন্ত্রের সমস্যা: ড্রাগন ফল খেলে অনেক সময় পাচনতন্ত্রের সমস্যা দেখা দেয়। পেট ব্যথা, বমি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
  • ডায়রিয়া: ড্রাগন ফল খেলে অনেক সময় ডায়রিয়া হয় ফলে আমাদের শরীরে পানি শূন্যতাসৃষ্টি হয়।
ড্রাগন ফল আমাদের পরিমাণমতো খেতে হবে অতিরিক্ত খেলে তা আমাদের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। ড্রাগন ফল খেলে নিম্ন রক্তচাপ বেড়ে যায় তাই আমাদের সঠিক সময়ে পরিমাণমতো ড্রাগন ফল খেতে হবে।

লেখক এর মন্তব্য

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থেকে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন। আরো তথ্য পেতে আমার ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। এরকম আরো পোস্ট পেতে অবশ্যই আপনার মতামত কমেন্ট বক্সে জানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অভ্রটেকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url