দিনে কয়টা ডিম খাওয়া যাবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
দিনে কয়টা ডিম খাওয়া যাবে সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেন না। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমার আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি সকল তথ্য জানতে পারবেনঅ এখানে হাঁসের ডিম খাওয়ার উপকারিতা, হাসির ডিম খেলে কি প্রেসার বাড়ে সেই সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন আশা করি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
এখানে শুধুমাত্র দিনে কয়টা ডিম খাওয়া যাবে সেই সম্পর্কে আলোচনা করা নেই এর পাশাপাশি রাতে ডিম খাওয়ার উপকারিতা, হাঁস না মুরগি কোন ডিম স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, কাঁচা ডিম খেলে কি শক্তি বাড়ে সেই সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ভূমিকা
ডিম হলো প্রোটিনের একটি উৎস। ডিমে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। আমাদের দিনে অন্তত একটি ডিম অবশ্যই খাওয়া উচিত। ডিম আমাদের শরীরে শক্তির সঞ্চার করে। ডিমে থাকা ক্যালসিয়াম আমাদের হাড়কে শক্ত ও মজবুত করে। ডিম খেলে আমাদের শরীরে সঠিকভাবে রক্তের সঞ্চালন ঘটে। সকলের উচিত তাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডিম রাখার এতে আমাদের শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
হাঁসের ডিম খাওয়ার উপকারিতা
পুষ্টিকর খাবার হিসেবে ডিম আমাদের অতি পরিচিত একটি খাবার। ডিমকে প্রোটিন ও পুষ্টি উপাদানের শক্তিঘর বলা হয়। মুরগির ডিম নিয়মিত খেলেও হাঁসের ডিম আমাদের তেমন একটা খাওয়া হয় না। ছোটবেলা থেকেই আমরা মুরগির ডিমের সাথে বেশি পরিচিত। হাঁসের ডিম ও মুরগির ডিমের স্বাদ প্রায় একই। হাঁসের ডিম মুরগির ডিমের চেয়ে আকারে কিছুটা বড় হয়।
হাঁসের ডিমের খোসা তুলনামূলক শক্ত ও মোটা হওয়ার সহজে নষ্ট হয় না। ফ্রিজে না রেখে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত বাইরে রেখে হাঁসের ডিম খাওয়া যায়। হাঁসের ডিমের উপকারিতা নিম্নরূপ:
- একটি হাঁসের ডিমে ১২১ কিলো ক্যালরি, প্রোটিন ১৩.৫ গ্রাম, ফ্যাট ১৭.৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭০ মিলিগ্রাম, লোহা ৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ২৬৯ মাইক্রোগ্রাম রয়েছে।
- ডিম আমাদের দেহে শক্তির যোগান দেয়। আমাদের প্রতিদিনের কার্যক্রমের জন্য প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয়। ডিম থেকে আমরা সেই শক্তি পাই। যারা প্রতিদিন ব্যায়াম করে হাঁসের ডিম তাদের জন্য একটি আদর্শ খাবার। এটি আরো বেশি শারীরিক পরিশ্রম করার শক্তি প্রদান করে। হাঁসের ডিমে থাকা ভিটামিন বি আমাদের গ্রহণকৃত খাবারকে এনার্জিতে রূপান্তরিত করে এবং সেই এনার্জি দীর্ঘসময় ধরে রাখে।
- আমাদের দেহের কিছু অতি প্রয়োজনীয় উপাদানের মধ্যে একটি হল প্রোটিন। আর প্রোটিনের একটি অন্যতম উৎস হলো হাঁসের ডিম। প্রোটিনের পাশাপাশি এতে থাকা ক্যালসিয়াম আমাদের দেহের হাড়কে শক্ত ও মজবুত করে। ডিম শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশে সহায়তা করে।
- হাঁসের ডিম হার্টের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় এর ফলে সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্তের সঞ্চালন ঘটে।
- চোখ আমাদের অমূল্য সম্পদ। একে ভালো রাখতে বিভিন্ন ভিটামিনের প্রয়োজন হয়। হাঁসের ডিমে ভিটামিন এ থাকে যা আমাদের দৃষ্টিশক্তিকে ভালো রাখে। ডিমে ক্যারোটিনয়েড ও লুটেইন থাকে যা বৃদ্ধ বয়সে ম্যাকুলার ডিজেনারেশন হওয়ার সম্ভাবনা কমায় এবং চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করে।
- মেয়েদের পিরিয়ডের সময় শরীর থেকে প্রচুর রক্ত যায় ফলে অ্যানিমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পিরিয়ডের সমস্যায় হাঁসের ডিম খেতে হবে কেননা এতে লৌহ রয়েছে যা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে।
- হাঁসের ডিম আমাদের দেহের কোলেস্টেরল কে নিয়ন্ত্রণ করে। হাঁসের ডিম খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাকে কমায় আর ভালো কোলেস্টেরল এর মাত্রাকে বৃদ্ধি করে।
- হাঁসের ডিম কোলাইনের একটি ভালো উৎস। এতে ৩০০-৩৫০ গ্রাম কোলাইন থাকে। তাই ডিম লিভার, স্নায়ু এবং যকৃত ভালো রাখে।
- হাঁসের ডিম ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
- হাঁসের ডিমের জিংক থাকে যা আমাদের দেহের ইমিউনিটি সিস্টেমকে সক্রিয় করে ফলে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
দিনে কয়টা ডিম খাওয়া যাবে
ডিম খেতে আমরা প্রায় সবাই পছন্দ করি। ডিম যেমন আমাদের শরীরের জন্য উপকারী তেমনি পরিমাণ মতো না খেলে এটা আমাদের শারীরিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ডিম হল প্রোটিনের একটি ভালো উৎস। তাই আমাদের উচিত একটি মাত্র ডিম খাওয়া। তবে তারা একটিমাত্র ডিম খাবেন যারা অন্যান্য আমিষ, প্রোটিন খাবার যেমন: মাছ, মাংস, দুধ ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে খেয়ে থাকেন।
আরও পড়ুন: দিনে কয়টি কলা খাওয়া উচিত
তবে যারা এসব খাবার খায় না তারা চাইলে দিনে দুই-তিনটি ডিম খেতে পারেন। সব সময় চেষ্টা করবেন ডিম পানিতে সেদ্ধ করে খাওয়ার বা পানিতে ভেজে খাওয়ার। তেল বা চর্বি দিয়ে ডিম ভেজে খেলে তা আমাদের শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রাকে বৃদ্ধি করে। তাই আমাদের তেল চর্বি পরিহার করা উচিত। সবচেয়ে ভালো হবে প্রতিদিন যদি আমরা একটি করে ডিম খায় এতে আমাদের প্রতিদিনের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে।
হাঁসের ডিম খেলে কি প্রেসার বাড়ে
অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে হাঁসের ডিম খেলে কি প্রেসার বাড়ে? অনেকে ভাবে হাঁসের ডিমে কোলেস্টেরল থাকে যার কারণে হাঁসের ডিম খেলে প্রেসার বেড়ে যায়। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণরূপে ভুল। হাঁসের ডিমে প্রেসার বাড়ে না। হাঁসের ডিম হলো প্রোটিনের একটি উৎস। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে যা মানবদেহে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে। যেহেতু ডিমে কোলেস্টেরল থাকে তাই অনেকে মনে করে ডিম খেলে প্রেসার বাড়ে।
ডিম খেলে প্রেসার বাড়বে কিনা সেটা অনেকটা নির্ভর করে ব্যক্তির স্বাস্থ্যের উপর। কেউ যদি অন্যান্য খাবার থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন পায় তাহলে তার দিনে একটি ডিম খাওয়ায় যথেষ্ট। একটি হাঁসের ডিমে প্রায় ২৪৫ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের ডিম খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। তবে সব ধরনের কোলেস্টেরল শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়।
হাঁসের ডিমে যে কোলেস্ট্রল থাকে সেটা LDL কোলেস্টেরল কে কমাতে সহায়তা করে। তাই আমরা যদি নিজেদের স্বাস্থ্য অনুযায়ী পরিমাণমতো হাঁসের ডিম খায় তাহলে আমাদের প্রেসার বাড়বে না।
হাঁস না মুরগি কোন ডিম স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী
অনেকের প্রশ্ন স্বাস্থ্যের জন্য হাঁসের ডিম বেশি খাওয়া ভালো নাকি মুরগির ডিম। হাঁসের ডিম মুরগির ডিমের থেকে আকারে কিছুটা বড় হয় এবং হাঁসের ডিমের খোসা তুলনামূলকভাবে শক্ত হওয়া এটি সহজে ভেঙে যায় না। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষরা বুঝে উঠতে পারেন না তারা কি হাসের ডিম খাবে নাকি মুরগির ডিম। কোন ডিমের হচ্ছে সবচেয়ে বেশি পুষ্টিগুণ।
ডিম নিয়ে আমাদের মধ্যে নানা বিতর্ক রয়েছে। অনেকের ধারণা হাঁসের ডিম অনেক ভালো আবার অনেকে ধারণা মুরগির ডিম বেশি ভালো। পুস্টিগুণের বিবেচনায় হাঁস ও মুরগির ডিমকে প্রায় একই বলা যায়। অনেকে মনে করে হাঁসের ডিমে হাঁপানি, হাঁপানি বেড়ে যায়, এলার্জি হয় এ কারণে অনেকে হাঁসের ডিম থেকে মুরগির ডিমটা বেশি খায়।
হাঁসের ডিমের এই বদনাম কিন্তু সম্পূর্ণরূপে ঠিক না। আপনি দাম এবং স্বাদ নিয়ে এই দুই ডিমের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারলেও পুষ্টিগুনের দিক দিয়ে এরা একই। প্রতি ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিম রয়েছে ১৮১ কিলো ক্যালরি আর প্রতি ১০০ গ্রাম মুরগির ডিম রয়েছে ১৭৩ কিলোক্যালরি খাদ্য শক্তি। পুষ্টিগুণের দিক দিয়ে উভয়টি প্রায় সমান পর্যায়ের পুষ্টি দিচ্ছে।
সুতরাং ডিম যেহেতু কেজিতে বিক্রি হয় না হালিতে বিক্রি হয় সেই দিক দিয়ে একটা হাঁসের ডিম মুরগির ডিমের চেয়ে আকারে বড় হয়। তাই আপনি যদি হাসের ডিম খান তাহলে কিছুটা পরিমাণ পুষ্টিগুণ বেশি পাবেন।
রাতে ডিম খাওয়ার উপকারিতা
ডিম অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার। ডিমের সাদা অংশে পানি রয়েছে ৮৮% এবং প্রোটিন রয়েছে ১১%, চর্বি ২% এবং খনিজ পদার্থ ৮%। ডিমের কুসুমে ১৯% পানি, ১৭.৫% প্রোটিন, ৩২.৫% চর্বি এবং ২% খনিজ পদার্থ রয়েছে। ডিমের কুসুম সহজে হজম হয়। ডিম ভেজে খাওয়া থেকে ডিম সিদ্ধ করে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। কারণ সিদ্ধ ডিমের মধ্যে সকল পুষ্টিগুণ বিদ্যমান থাকে।
ডিম সাধারণত আমরা সকালের নাস্তায় খায় কিন্তু রাতে যে ডিম খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে সেটা আমরা অনেকে জানিনা। রাতে ডিম খেলে ডিম আমাদের প্রোটিনের ঘাটতি দূর করে। এর প্রোটিন শরীরের মাসলকে উন্নত করে ও শরীরে টিস্যুকোষ গুলোকে শক্তিশালী করে। ডিমে লুটেনিন ও জিয়াঅক্সেথিন ক্যারোটিন থাকে যা আমাদের দৃষ্টি শক্তি উন্নত করে। ডিমের এসব প্রোটিন চোখের ছানি, ম্যাকুলার পতন ও সূর্যের বেগুনি রশ্মি থেকে আমাদের চোখকে রক্ষা করে।
ডিমে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকে যা হাড়ের অস্টিওপোরোসিস রোগ থেকে মুক্তি প্রদান করে। ডিম আমাদের দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। মস্তিষ্কের জন্য ডিম খুব ভালো কাজ করে। এটি রয়েছে কোলিন যা নিউরো ট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে। প্রতিদিন যদি সকালে বা রাতে একটি করে ডিম খেতে পারেন তাহলে অনেক রোগের হাত থেকে মুক্তি পাবেন।
কাঁচা ডিম খেলে কি শক্তি বাড়ে
ডিমের মধ্যে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণঅ কিন্তু এই ডিম আমরা কাঁচা খাবো নাকি সিদ্ধ খাব? কাঁচা ডিম খেলে কি শক্তি বাড়ে এ ধরনের প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। কাচা ডিম খেলে শক্তি বাড়ে কথাটি সম্পূর্ণ ভুল, এর কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। বরং কাঁচা ডিম খেলে নানা ধরনের রোগব্যাধি হতে পারে। কাঁচা ডিম সহজে হজম হয় না।
কাঁচা ডিম খেলে শরীরে বায়োটিনের অভাব হয় ফলে ওজন কমে যায়, জিহ্বা রুক্ষ হয় এবং ত্বকের প্রদাহ হয়। কাঁচা ডিমে সালমোনেলা নামক একপ্রকার ব্যাকটেরিয়া থাকে যার কারণে পেটের অসুখ, বমি, এমনকি টাইফয়েড পর্যন্ত হতে পারে। তাই কাঁচা ডিম না খাওয়াই ভালো। ডিম সবসময় সিদ্ধ করে খাওয়া উচিত।
লেখক এর মন্তব্য
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থেকে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি দিনে কয়টা ডিম খাওয়া যাবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। আরও তথ্য পেতে আমার ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আর্টিকেলটি পরে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। এরকম আরো পোস্ট পেতে অবশ্যই আপনার মতামত কমেন্ট বক্সে জানাবেন।
অভ্রটেকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url