বিটরুটের জুস কেন খাবেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

বিটরুটের জুস কেন খাবেন সেই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেন না। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমার আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি সকল তথ্য জানতে পারবেন। এখানে গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা, বিটরুটের দাম কত সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন আশা করি আপনারা সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
বিটরুটের জুস কেন খাবেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
এখানে শুধুমাত্র বিটরুটের জুস কেন খাব সে সম্পর্কে আলোচনা করার নেই এর পাশাপাশি বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা, কখন বিটরুট খাবেন আর কখন খাবেন না, বাচ্চাদের বিটরুট খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

ভূমিকা

বিটরুট হল বিট গাছের মূল অংশ। এটি লাল বিট বা সোনালী বিট নামে পরিচিত। বিটে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। বিটরুট খেলে আমাদের শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সক্রিয় করে তোলে। বিটে ক্যারোটিনয়েড থাকে যা আমাদের চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করে। গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা

বিটরুট আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শীতকালে বিটরুটের উৎপাদন ও চাহিদা থাকে ব্যাপক। বিটরুট ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর। এছাড়াও এতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, জিংক, আয়োডিন, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি ও ফাইবার আছে। বিটরুট আমরা কাঁচা খেতে পারি আবার রান্না করেও খেতে পারি। সাধারণত বিটরুট সালাদ ও জুস হিসেবে বেশি খাওয়া হয়। বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা নিম্নরূপ:
  • যাদের অ্যানিমিয়া ও রক্তস্বল্পতা সমস্যা রয়েছে বিটরুট তাদের জন্য খুবই উপকারী। কারণ বিটে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে;
  • বিটরুটে রয়েছে নাইট্রেট উপাদান যা বিভিন্ন মানসিক সমস্যা যেমন: ডিমেনশিয়া, স্মৃতিভংস থেকে রক্ষা করে;
  • নিয়মিত বিটরুট খেলে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়;
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিটরুট খুব ভালো কাজ করে;
  • বিটরুট হজম ক্ষমতা বাড়ায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে;
  • বিটরুটে বিটা লাইন নামক একপ্রকার ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট থাকে যা কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের প্রদাহ কমায়;
  • বিটরুট ফ্যাটি লিভারের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে;
  • কলেরা, ডায়রিয়া, বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় খুব ভালো কাজ করে;
  • বিটরুট রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে;
  • মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে;
  • ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়;
  • রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে সহায়তা করে;
  • বিটরুটে থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের ত্বককে কোমল ও সুন্দর করে।

বিটরুটের জুস কেন খাবেন

আমরা প্রতিদিন নানা ধরনের জুস খেয়ে থাকি তবে আকর্ষণীয় রঙের জন্য বিটের জুস একটা আলাদাই নজর কাড়ে। একে আমরা সুপারফুড বলে থাকি। বিটরুট এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং এতে বিটেইন নামক একটি উপাদান রয়েছে যা আমাদের লিভার কে ভালো রাখতে সহায়তা করে। বিটরুট প্রদাহ নাশক হিসেবে খুব ভালো কাজ করে। এতে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন বি৬ ও ভিটামিন সি। 


বিটরুটের জুস আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে। যারা ত্বকের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য বিটরুট খুব কার্যকরি। প্রতিদিন বিটের জুস পান করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং মুখে যদি ব্রণ থাকে তাহলে তা নিরাময় হয়। যারা চুলের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য খুবই উপাদেয় খাবার। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রেট যা নাইট্রিক অক্সাইডে পরিণত হয়ে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের পরিমাণকে বাড়িয়ে দেয় যা আমাদের মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে। 

নিয়মিত বিটের জুস পান করলে আমাদের শরীরের রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। নিজের ত্বককে তরুণ ও সতেজ রাখার জন্য এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিদিন এক গ্লাস বিটে জুস পান করা অবশ্যই জরুরী।

বিটরুটের দাম কত

বিটরুটের অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। বিটরুট আমাদের দেহের রক্তস্বল্পতা থেকে মুক্তি দেয়। বিট খেলে শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে বিটরুটের চাহিদা ব্যাপক তাই অনেকেই এটি চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। অনেকেই বিটরুটের দাম কত সেটি জানতে চাই। আসুন আমরা বিটরুটের দাম জানি। আপনারা যদি যারা সরাসরি চাষ করে তাদের থেকে কিনতে পারেন তাহলে দাম কিছুটা কম পড়বে আর বাজার থেকে কিনলে দাম একটু বেশি হবে। তবে বিভিন্ন জায়গায় বিটরুটের দাম বিভিন্ন। 

অনলাইন প্রতিষ্ঠান দারাজ থেকেও আপনি বিটরুট কিনতে পারেন। বিটরুট চাষীদের থেকে যদি আপনি বিটরুট কিনেন তাহলে প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে পেয়ে যাবেন আর যদি দারাজ থেকে কিনেন তাহলে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে পাবেন। বিটরুট দুই ভাবে পাওয়া যায় একটি কাঁচা অবস্থায় আর অন্যটি পাউডার হিসেবে। 

কাঁচা বিটরুট থেকে বিটরুট পাউডারের দাম অনেক বেশি কারণ অনেকগুলো বিট রোদে শুকালে অল্প একটু পাউডার পাওয়া যায়। তবুও চাহিদা দিন দিন এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি ১০০ গ্রাম পাউডারের দাম ৩০০ টাকা এবং ২৫০ গ্রাম পাউডারের দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। তবে স্থানভেদে এর দাম কম বেশি হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা

বিটরুট আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। বিটরুটের মূল মাটির নিচে জন্মে। এর বিট অংশ মাটির নিচে থাকে। একে লাল বিট, সোনালী বিট ও গার্ডেন বলা হয়। বিটরুটে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, রিরোফ্লাবিন, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন বি৬, বিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও সোডিয়াম রয়েছে। 


বিটরুট গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুব ভালো। বিটরুট আমাদের দেহে লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। গর্ভবতী মায়েদের তাদের গর্ভাবস্থায় বিটরুটের জুস পান করা উচিত যা মা ও বাচ্চা উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা নিম্নরূপ:
  • বিটরুটে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে তাই গর্ভাবস্থায় বিটরুট খেলে আয়রনের ঘাটতি দূর হয়;
  • গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ সহায়তা করে;
  • বিটরুট গর্ভবতী মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে;
  • বিটরুট গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে;
  • গর্ভাবস্থায় বিটরুট খেলে তা নিউরাল টিউবের ত্রুটি প্রতিরোধ করে;
  • গর্ভাবস্থায় বিটরুট খেলে তা নিউরাল টিউবের ক্রটি প্রতিরোধ করে;
  • গর্ভবস্থায় বিটরুট খেলে প্রি-ইক্ল্যাম্পসিয়ার ঝুকি কমে;
  • বিটরুটে ফলিক অ্যাসিড থাকে যা গর্ভের সন্তানের টিস্যু ও স্পাইনাল কর্ড গঠনের জন্য প্রয়োজন;
  • গর্ভাবস্থায় বিটরুট খেলে অনাক্রম্যতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে;
  • বিটরুটে পটাশিয়াম রয়েছে যা রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে;
  • বিটরুটে ক্যালসিয়াম ও সিলিকা রয়েছে যা হাড় ও দাঁতকে শক্ত করে;
  • বিটরুটে বিটা সায়ানিন থাকে যার যকৃত ও রক্তকোষকে বিমুক্ত করতে সহায়তা করে।

বিটরুট কখন খাবেন আর কখন খাবেন না

পুষ্টিগুণের দিক দিয়ে বিটরুট সুপার ফুড নামে পরিচিত। বিটরুটের অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। এটি আমাদের দেহে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি করে আমাদের রক্তস্বল্পতার হাত থেকে রক্ষা করে। বিটরুট কাঁচা এবং রান্না উভয়য় অবস্থায় খেতে পারি। সাধারণ আমরা জুস, সালাদ, স্মুদি হিসেবে খেয়ে থাকি। তবে বিটরুট স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলে সব সময় খাওয়া যাবে না। 

কোন জিনিসই অতিরিক্ত ভালো না তাই সবকিছু পরিমাণ মতো খেতে হবে। বিটরুট আমাদের দেশে সারা বছরই পাওয়া যায়। বিটরুট বিভিন্ন ফলের সাথে মিশিয়ে জুস করে খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের বিটরুট না খাওয়াই ভালো কারণ বিটরুটে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকে যার রক্তের শর্করার মাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়। 

যাদের কিডনিতে পাথর জমার সমস্যা রয়েছে তাদের বিট না খাওয়াই ভালো কারণ বিটে অক্সালে থাকে যা এই শারীরিক সমস্যা কে বাড়িয়ে তোলে। যাদের রক্তচাপ কম তাদের বিটরুট এড়িয়ে চলা উচিত। অতিরিক্ত বিট খেলে চুলকানি, অ্যালার্জির মত সমস্যা দেখা দেয়। সপ্তাহে টানা সাত দিন বিটরুট না খেয়ে ৪-৫ দিন খাওয়া উচিত। সাধারণত বিটরুট সকাল বেলা খাওয়া ভালো আর সালাদ হিসেবে আমরা দুপুরে ও রাতে খেতে পারি।

বাচ্চাদের বিটরুট খাওয়ার নিয়ম

জন্মের পর ছয় মাস পর্যন্ত শিশু দুধ ছাড়া অন্য কিছু খেতে পারে না। ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার পর মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি শিশুরা অন্যান্য খাবার খাওয়া শুরু করে। বিটরুট শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। পেডিয়াট্রিশিয়ানরা শিশুদের ৮ থেকে ১০ মাস বয়সের পর থেকে বিটরুট খাওয়ার পরামর্শ দেন। আপনার শিশুর ডায়েটের সাথে মিলিয়ে আপনি এটি রাখতে পারেন। 

শিশুকে বিটের জুস খাওয়ার সময় এক দুই চামচের বেশি খাওয়াবেন না কারণ বিট নাইট্রেট সমৃদ্ধ যা শিশুর পক্ষে হজম করা সমস্যা হতে পারে। নাইট্রেটের পরিমাণ কমাতে সিদ্ধ করে দিতে পারেন। বিট খাওয়ানোর সময় লক্ষ্য রাখবেন এটি আপনার শিশু শরীরে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে কিনা। যদি বিটরুট খাওয়ার ফলে শিশুদের কোন শারীরিক সমস্যা হয় তাহলে শিশুকে বিট খাওয়া থেকে বিরত রাখুন।

লেখক এর মন্তব্য

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থেকে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি বিটরুটের জুস কেন খাবেন সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন। আরো তথ্য পেতে আমার ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। এরকম আরো পোস্ট পেতে অবশ্যই আপনার মতামত কমেন্ট বক্সে জানাবেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অভ্রটেকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url