মেয়েদের জন্য সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কোনটি বিস্তারিত জানুন
মেয়েদের জন্য সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কোনটি সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেন না। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমার আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি সকল তথ্য জানতে পারবেন। এখানে উদ্যোক্তা হওয়ার পথে বাধা সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন আশা করি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
এখানে মেয়েদের জন্য সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কোনটি এর পাশাপাশি উদ্যোক্তা হওয়ার উপায়, কিভাবে একটা ব্যবসা শুরু করা যায়, ঘরে বসে মেয়েদের ইনকাম করার উপায় সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ভূমিকা
উদ্যোক্তা শব্দের অর্থ সংগঠক। যখন কেউ নিজের বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু উদ্ভাবন করার মাধ্যমে জনসাধারণের সাড়া পেয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হয় তখন তাকে আমরা উদ্যোক্তা বলি। নারীদের উদ্যোক্তা হতে অনেক বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। তবুও তারা আত্মবিশ্বাস ও পরিশ্রমের জোরে সামনে এগিয়ে যাই। মেয়েদের জন্য সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কোনটি তা আমরা এখন জানবো।
উদ্যোক্তা কাকে বলে
উদ্যোক্তা হলো এমন একজন ব্যক্তি যে পরনির্ভরশীল না হয়ে নিজের চেষ্টায় জ্ঞান বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু তৈরি করে আয়রোজগারের পথ তৈরি করে। উদ্যোক্তারা কখনো পরের অধীনে কাজ করে না। একজন উদ্যোক্তা হতে হলে আপনাকে আগে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। নিজের প্রতি বিশ্বাস না থাকলে কখনোই কোন কিছু করা সম্ভব নয়।
একজন উদ্যোক্তা তার উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন পন্য তৈরি করার মাধ্যমে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তার কাজ যত সুন্দর হবে সে তত দ্রুত উন্নতি করতে পারবে। বর্তমানে আমাদের সমাজে অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে যারা অন্যের অধীনে কাজ না করে নিজের চেষ্টায় কিছু করার মাধ্যমে যেমন নিজে লাভবান হচ্ছে তেমনি অনেকের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে।
কিভাবে একটা ব্যবসা শুরু করা যায়
কিভাবে একটা ব্যবসা শুরু করা যায় এই প্রশ্ন অনেকের মনে ঘুরপাক খায়। কোন ব্যবসা শুরু করার প্রথমে আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে আপনি বাড়িতে বসে ব্যবসা করতে চান নাকি বাইরে দোকান দিতে চান। বর্তমানে প্রায় সবাই ঘরে বসে ব্যবসা কে বেছে নিচ্ছে কারণ এতে সময় ও খরচ উভয় বেঁচে যায়। এরপর ঠিক করতে হবে আপনি কি নিয়ে ব্যবসা করতে চান।
আপনি কি শাড়ি, চুড়ি, কসমেটিকস, স্যান্ডেল, ফুলগাছ, খাদ্যপণ্য ইত্যাদি নিয়ে ব্যবসা করতে চাচ্ছেন। যদি চান তাহলে আপনাকে প্রথমে ঠিক করে নিতে হবে আপনি কোন পণ্যটি নিয়ে কাজ করতে চান। এরপর আপনাকে জানতে হবে বাজারে এই ব্যবসাটি কেমন চলে। ব্যবসাটি নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করতে হবে। এরপর আপনি আপনার ব্যবসা কেমনে চালাবেন সে সম্পর্কে একটি পরিকল্পনা করে নিতে হবে।
তারপর আপনাকে ব্যবসা নিবন্ধন করাতে হবে। তবে আপনি যদি অনলাইনে ব্যবসা করেন তাহলে নিবন্ধন করার প্রয়োজন নেই। আপনি যদি কোন শহর বা রাজ্যে সশরীরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন আর আপনার অধীনে কিছু কর্মচারী কাজ করে তাহলে আপনাকে আপনার ব্যবসার জন্য অবশ্যই নিবন্ধন করতে হবে।
আপনার ব্যবসার লেনদেনের জন্য আপনাকে একটি বিজনেস ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এরপর আপনার ব্যবসাকে বাজারজাত করতে হবে সকলের সামনে তুলে ধরতে হবে। আপনার ব্যবসার জন্য যদি কর্মচারীর প্রয়োজন হয় তাহলে কর্মচারী নিয়োগ দিতে হবে। একজন ব্যবসায়ীর পরিশ্রম, বুদ্ধি, প্রচেষ্টা এবং উদ্বেগের মাধ্যমে একটি বিজনেস দ্রুত উন্নতি লাভ করে।
ঘরে বসে মেয়েদের ইনকাম করার উপায়
ঘরে বসে মেয়েদের ইনকাম করার উপায় রয়েছে অনেক। ছেলেদের মত মেয়েরা তেমন বাইরে কাজ করতে বের হয় না। বর্তমানে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও শিক্ষিত হচ্ছে কিন্তু ছেলেদের মতো তারা চাকরি করে না। ছেলে হোক বা মেয়ে হোক প্রত্যেকের আত্মনির্ভরশীল হওয়া উচিত। মেয়েদের উচিত নিজের জন্য কিছু করার যাতে নিজের প্রয়োজনে অন্যের কাছে হাত পেতে থাকা ধার নিতে না হয়।
মেয়েরা চাইলেই ঘরে বসে ব্যবসা করার মাধ্যমে ইনকাম করতে পারে। প্রত্যেকের মধ্যে কিছু না কিছু সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে। এই সুপ্ত প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন একজন আত্মনির্ভরশীল নারী। যারা ভাল রান্না করতে পারে তারা যদি অনলাইনে ফুড ডেলিভারি করার পেজ খুলে তাহলে অনেকে সেটা জানতে পেরে খাবারের অর্ডার দিতে পারে।
যারা ভালো সেলাই করতে পারে, ডিজাইন করতে পারে তারা চাইলে কাপড়ের ব্যবসা করতে পারে। যার মধ্যে যে প্রতিভা রয়েছে যে কাজটা করতে তার ভালো লাগে সেটি করার মাধ্যমে ইনকাম করতে পারে।
মেয়েদের জন্য সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা
ঘরে বসে কূটকাচালি করার চেয়ে নিজের জন্য কিছু করা অনেক ভালো। মেয়েরা যেমন রাঁধতে পারে তেমনি চুলও বাঁধতে পারে। তারা যেমন বাড়িতে কাজ করতে পারে তেমনি ছেলেদের সাথে পা মিলিয়ে বাইরে ও কাজ করতে পারে। তবে অনেকেই সংসার সামলিয়ে বাইরে কাজ করতে যেতে পারে না তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো ব্যবসা হল ঘরে বসে কাজ করা।
মেয়েদের জন্য সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কোনটি সেটি অনেকে জানতে চায়। এখন আমরা দেখব মেয়েদের জন্য সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কোনটি।
- অনলাইনে শাড়ি বিক্রি করা: ঘরে বসে অনলাইনে শাড়ি বিক্রি করে মেয়েরা ইনকাম করতে পারে। পাইকারি বা হোলসেল মার্কেট থেকে কম দামে শাড়ি কিনতে পাওয়া যায়। এসব পাইকারি দোকান থেকে শাড়ি কিনে এনে আমরা অল্প কিছু লাভ রেখে বিক্রি করতে পারি। বর্তমানে অনেকে এখন অনলাইন শপিং করতে পছন্দ করে। ঘরে বসে পন্য পছন্দ করে তারা হোম ডেলিভারি পেয়ে যাই তাই অনেকে অনলাইনে পণ্য কিনতে পছন্দ করে।
- হোমমেড আচার তৈরি করে: আচার খেতে পছন্দ করে না এমন খুব কম মানুষই আছে। আচার পছন্দ হলেও এটি বানাতে অনেক ঝামেলা বলে অনেকেই ঘরে বানানোর চেয়ে কিনে খায়। আচার তৈরি করে বিক্রি করে মেয়েরা ইনকাম করতে পারে।
- অর্গানিক হেয়ার অয়েল তৈরি করে: বর্তমানে অর্গানিক হেয়ার অয়েল সকলের পছন্দের। এই অর্গানিক হেয়ার অয়েল তৈরি করতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করতে হয় যেটি করা মোটেও সহজ নয়। তাই অনেকে এটি নিজের বাসায় তৈরি করার চেয়ে কিনে ব্যবহার করতে বেশি পছন্দ করে। যারা এইসব অর্গানিক হেয়ার অয়েল বানাতে পারে তারা চাইলে বাসায় বসে অর্গানিক হেয়ার অয়েল তৈরি ইনকাম করতে পারে।
- হোমমেড কেক: কেক খেতে সকলে পছন্দ করে। বর্তমানে অনেকেই এখন সুন্দর সুন্দর হোম মেড কেক বানাতে পারে। আপনার মধ্যে যদি হোমমেড কেক বানানোর প্রতিভা থাকে তাহলে এটিকে আপনি কাজে লাগিয়ে একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারেন।
- ব্লগিং করার মাধ্যমে: ব্লগিং বর্তমান সময়ের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। ঘরে বসেই বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে আপনি ব্লগিং করতে পারেন। আপনি কোথায় যাচ্ছেন, কি খাচ্ছেন, কোথায় ঘোরাফেরা করছেন সবকিছু আপনি ব্লগিংয়ের মাধ্যমে সকলের সামনে তুলে ধরে ইনকাম করতে পারেন।
- চাল কুমড়ার বড়ি বিক্রি করে: বড়ি খেতে অনেকে পছন্দ করে কিন্তু সবাই বড়ি দিতে জানে না। আবার সবার হাতের বড়ি ভালো হয় না। তাই আপনি যদি ভালোভাবে চাল কুমড়ার ভরি দিতে পারেন তাহলে এটি বিক্রি করে আপনি আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবেন।
- চিয়াসিড বিক্রি করে: অনেকেই চিয়াসিড খেয়ে থাকেন। চিয়াসিডে অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে এটি আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। আপনার কাছে যদি ভালো চিয়াসিড থাকে তাহলে আপনি এটি বিক্রি করে করতে পারেন।
- মধুময় বাদাম বিক্রি করে: মধুময় বাদাম বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। এটি আমাদের শারীরিক শক্তিকে বৃদ্ধি করে, শরীরের শক্তি যোগায়। এটি খেতে খুবই সুস্বাদু। কয়েক রকমের বাদাম, বীজ ও মধু দিয়ে এই মধুময় বাদাম তৈরি করা হয়।
উদ্যোক্তা হওয়ার পথে বাধা
উদ্যোক্তা হওয়া খুব একটা সহজ কাজ নয়। উদ্যোক্তা হওয়ার পথে বাধা আসে অনেক সময়। আমরা সবসময় মানুষের সফলতা দেখি কিন্তু সফল হওয়ার পিছনে তাদের কষ্টগুলো দেখি না। আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা কাউকে সফল হতে দেখে শান্তি পায় না। কেউ এক ধাপ সামনে এগোলে তাকে দুইধাপ পেছনে টেনে ধরে।
একজন নারীর শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি আত্মনির্ভরশীল হওয়া উচিত। উদ্যোক্তা হওয়া মোটেও সহজ নয় এর জন্য নানা সামাজিক হেনস্থার শিকার হতে হয়। আপনি যখনই নিজ চেষ্টায় নতুন কিছু উদ্ভাবন করে বাজারজাত করবেন তখন দেখবেন অনেকেই সেটি ভালোভাবে নিচ্ছে না। আপনাকে নিয়ে নানা কটুক্তিপূর্ণ মন্তব্য করবে, আপনাকে বাঁকা চোখে দেখবে, হাসি মজা করবে, হেয় প্রতিপন্ন করবে কিন্তু এসবের দিকে নজর দিলে চলবে না।
সফল হতে গেলে শুধু পরিশ্রম করতে হবে এগুলোতে কান দিলে চলবে না। একবার কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সফল হলে দেখবেন এরাই আপনার গুনগান করছে। তাই এইসব অবস্থায় দমে না গিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
নারী উদ্যোক্তা হওয়ার উপায়
নারী উদ্যোক্তা হওয়ার উপায় রয়েছে অনেক। বর্তমানে পুরুষদের সাথে সাথে নারীরাও শিক্ষিত হচ্ছে। নারীরা পুরুষদের তুলনায় কোন অংশেই আর পিছিয়ে নেই। উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য অবশ্যই আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস না থাকলে কোন কিছুই করা সম্ভব নয়। আমরা যে কাজ করব সে কাজের প্রতি আমাদের পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী হতে হবে।
আমরা যে কাজ করব তার প্রতি আমাদের আগ্রহ, দক্ষতা ও শক্তি থাকতে হবে। ব্যবসা শুরু করার পূর্বে পরিকল্পনা করে নিতে হবে। কারণ পরিকল্পনা ছাড়া কোন কাজ সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয় না্ প্রথমে আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে আপনার ব্যবসাটি অনলাইন নাকি অফলাইন ভিত্তিক হবে। কোন পণ্য নিয়ে আপনি কাজ করবেন, সেই পণ্যের বাজার চাহিদা কেমন, মূল্য নির্ধারণের কৌশল।
আশেপাশের মেন্টর ও নারী উদ্যোক্তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। সবার সাথে ভালো নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা করে তুলতে হবে। ব্যর্থ হলে থেমে থাকা যাবে না বরং ব্যবসা থেকে শিক্ষা নিয়ে সফল হতে হবে তবেই আপনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হতে পারবেন।
লেখক এর মন্তব্য
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থেকে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি মেয়েদের জন্য সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কোনটি সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন। আরো তথ্য পেতে আমার ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। এরকম আরো পোস্ট পেতে অবশ্যই আপনার মতামত কমেন্ট বক্স জানাবেন।
অভ্রটেকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url