প্রতিদিন কতটুকু আদা খাওয়া যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

প্রতিদিন কতটুকু আদা খাওয়া যায় সেই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেন না। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমার আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি সকল তথ্য জানতে পারবেন। এখানে পুরুষদের জন্য আদার উপকারিতা সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন আশা করি আপনারা সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
প্রতিদিন কতটুকু আদা খাওয়া যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
এখানে শুধুমাত্র প্রতিদিন কতটুকু আদা খাওয়া যায় সেই সম্পর্কে আলোচনা করা নেই। এর পাশাপাশি আদা চা তৈরি নিয়ম, কাঁচা আদা খাওয়ার নিয়ম, আদা চা খেলে কি ক্ষতি হয় সেই সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে।

ভূমিকা

চা আমাদের সকলের খুবই পছন্দনীয় একটি পানীয়। খুব কম মানুষই আছে যারা চা খেতে অপছন্দ করে। কেউ দুধ যা পছন্দ করে আবার কেউ আদা চা। দুধ চা খেলে আমাদের মন ভরে যায়, তৃপ্তি আসে কিন্তু আদা চা আমাদের শুধু তৃপ্তি দেয় না এর পাশাপাশি আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেমকে সক্রিয় করে তোলে। সর্দি-জ্বরে এক কাপ আদা চা মাথা ব্যাথা থেকে মুক্তি দেয়।

আদা চা খাওয়ার উপকারিতা

আমাদের শরীরের জন্য আদা চা খুবই উপকারী। এক কাপ আদা চা শুধু আমাদের স্বস্তিই দেয় না এর সাথে আমাদের দেহের রোগ জীবাণুর প্রতি কঠোর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। আদায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, শর্করা, আঁশ ও খনিজ লবণ রয়েছে। আদা বদহজম দূর করতে খুব ভালো কাজ করে। 

খাবার খাবার পূর্বে এক টুকরো আদা চিবিয়ে খেলে এটি বদহজম ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদা খুবই উপকারী। এটি ইনসুলিনের মাত্রা কে বৃদ্ধি করে এবং রক্তে গ্লকোজের মাত্রা কে নিয়ন্ত্রণ করে কোলেস্টেরল লেভেলকে কমিয়ে দেয়। ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিন অন্তত ২ গ্রাম করে আদা খেতে হবে তাহলে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকবে। 


ব্যথা নাশক হিসেবে আদা খুব ভালো কাজ করে। মেয়েদের মাসিকের তলপেটের প্রদাহ দূরীকরণে এটি খুব কার্যকরী। আদার মধ্যে জিনজেরল থাকে যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে। পাকস্থলিতে সৃষ্ট ক্ষতকে সারিয়ে ক্যান্সার হওয়া থেকে আদা শরীরকে রক্ষা করে। 

আদার তৈরি হেয়ার প্যাক চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখে, চুল পড়া, খুশকি হওয়া, চুল ফাটা ইত্যাদি সমস্যা থেকে মুক্তি প্রদান করে। আদার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার হলো এটি সর্দি কাশি উপশমে খুব ভালো কাজ করে। এক কাপ আদা চা আমাদের সর্দি কাশি থেকে নিরাময় পেতে সহায়তা করে। আদা চা খাওয়ার উপকারিতা আমাদের জীবনে অপরিসীম।

আদা চা তৈরির নিয়ম

এক কাপ গরম গরম আদা চা আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী। আদা আমাদের শরীরকে ডিহাইড্রেট করে। এর অনেক ঔষধি গুন রয়েছে। সর্দি কাশি উপশমে আদা যা খুব ভালো কাজ করে। ওজন কমিয়ে শরীরকে ফিট রাখতে হয় এইটা খুব কার্যকরী। আদা চা তৈরির নিয়ম নিম্নরূপ-
উপকরণ:
  • আদার টুকরো;
  • লেবু;
  • গোলমরিচ;
  • দারুচিনি;
  • পানি;
  • চা পাতা ও
  • চিনি।
প্রস্তুত প্রণালী:
একটি পাত্রে প্রথমে পানি নিতে হবে কয়েক টুকরো আদা, দারুচিনি, গোলমরিচ থেঁতো করে পানিতে দিয়ে পানি ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। পানিতে বলক উঠলে চাপাতি দিয়ে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর একটি কাপে চা ভালোমতো ছেকে কয়েক ফোটা লেবুর রস চিপে দিতে হবে। 

কেউ যদি মিষ্টি খেতে চায় সে ক্ষেত্রে সে চিনি যোগ করতে পারে আর কেউ যদি ওজন কমানোর জন্য এই চা খেতে চাই তাহলে চিনি যোগ করার কোন প্রয়োজন নেই। এবার উপভোগ করুন গরম গরম আদা চা।

প্রতিদিন কতটুকু আদা খাওয়া যায়

আদার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি কিন্তু প্রতিদিন কতটুকু আদা খাওয়া যায় সে সম্পর্কে আমরা অনেকে সঠিক জানিনা। আদার যেমন উপকারী দিক রয়েছে তেমনি এর অনেক অপকারী দিকও রয়েছে। বেশি বেশি কোন জিনিসই ভালো না। তাই আমাদের সঠিক পরিমাণ জেনে আদা খেতে হবে। 

সাধারণত প্রতিদিন ৩ গ্রাম পর্যন্ত আদা খাওয়া যেতে পারে। তবে কেউ যদি ওজনকমানোর জন্য আদা খান তাহলে ১ গ্রাম খাওয়া যথেষ্ট। গর্ভবতী মহিলাদের ১.৫ গ্রাম এর চেয়ে বেশি আদা খাওয়া ঠিক না এতে ক্ষতি হতে পারে। আদার অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। এটি আমাদের শরীরকে ডিহাইড্রেট করে।

কাঁচা আদা খাওয়ার নিয়ম

আদা আমাদের বিভিন্ন রোগ মুক্তির উপায়। আদা আমাদের বদহজম দূর করে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি প্রদান করে। তবে প্রতিদিন কতটুকু আদা খাওয়া যায় তা জানতে হবে। কাঁচা আদা সামান্য লবণ দিয়ে চিবিয়ে খেলে খাবারের রুটি আছে। যাদের খেতে ইচ্ছে করে না, খাবারের অরুচি আসে, ওজন কমে যাচ্ছে তাদের উচিত কাঁচা আদা খাওয়া। এতে খাবারের রুচি ফিরে আসবে। 

এছাড়া এক চামচ আদার রস, লেবুর রস, তুলসী পাতা গরম পানিতে চায়ের মত করে খেলে সর্দি কাশি থেকে উপশম পাওয়া যায়। আবার আদা রসের সাথে মধু ও আমলকি গুড়া মিশিয়ে রেখে প্রতিদিন তিনবার খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

পুরুষদের জন্য আদা রসের উপকারিতা

আদা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আর পুরুষদের জন্য আদা রসের উপকারিতা অনেক। আদা আমাদের শরীরের প্রদাহ কমাতে, শক্ত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। আদার রস পুরুষের যৌন ক্ষমতা কে বৃদ্ধি করে। আদায় ভোলাটাইল অয়েল থাকাই এটি স্নায়ুর উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়। নিয়মিত আদার রস পান করলে শরীরে রক্তের সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। 


আদায় এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যার টেস্টোস্টেরন হরমোন কে বৃদ্ধি করে। আদার রস ও মধু পান করলে পুরুষদের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। আদায় ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, মিনারেল ও অ্যামিনো এসিড রয়েছে। আদার রস পান করলে হৃদরোগে ঝুঁকি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এটি আমাদের হৃদ যন্ত্রের ক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখে। 

আদা রস পান করলে আমাদের ধমনীতে চর্বি জমে না ফলে হার্ট অ্যাটাক হওয়া সম্ভাবনা কমে যায়। বিবাহিত পুরুষদের জন্য আদার রস খুব ভালো কাজ করে। গরম পানিআদা রস ও মধু মিশিয়ে পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

আদা চা খেলে কি ক্ষতি হয়

আদা চা খেলে যেমন আমাদের শরীরের উপকার হয় তেমনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি আমাদের জন্য ক্ষতিও বয়ে আনে। আদা চা অবশ্যই খেতে হবে তবে কিছু বাধ্যবাধকতাও বজায় রাখতে হবে তা না হলে আমাদের শরীরের ক্ষতি হয়ে যাবে। প্রতিদিন কতটুকু আদা খাওয়া যায় সে সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। কোন কোন সময় আমরা আদা চা খাওয়া থেকে বিরত থাকবো তা নিম্নরূপ-
  • যারা রক্ত পাতলা করার ঔষধ খান তাদের জন্য আদা খুবই ক্ষতিকর। এই সময় আদা খেলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে;;
  • ব্যথা নাশক ঔষধ সেবন করলেও আদা খাওয়া যাবে না
  • যারা উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ খান তারা যদি আদা খায় তাহলে রক্তচাপ বেশি কমে গিয়ে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে;
  • গর্ভকালীন সময় আগাছা খাওয়া যাবে না। আদা চা খেলে অনেক সময় প্রি ম্যাচিওর বেবির জন্ম হয়;
  • খালি পেটে খেলে গ্যাস হয় ;
  • পাতলা পায়খানা পায়খানায় আদা চা খাওয়া যাবে না;
  • ডায়াবেটিসের ওষুধ যারা খায় তাদের আদা চা খাওয়া যাবেনা।

লেখক এর মন্তব্য

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থেকে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি প্রতিদিন কতটুকু আদা খাওয়া যায় সেই সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন। আরও তথ্য পেতে আমার ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। এরকম আরো পোস্ট পেতে অবশ্যই আপনার মতামত কমেন্ট বক্সে জানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অভ্রটেকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url