ডায়াবেটিস হলে কি আম খাওয়া যাবে বিস্তারিত জানুন
ডায়াবেটিস হলে কি আম খাওয়া যাবে সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেন না। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমার আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনি সকল তথ্য জানতে পারবেন। এখানে ডায়াবেটিস হলে কি কলা খাওয়া যাবে সে সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে করুন আশা করি আপনারা সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
এখানে শুধুমাত্র ডায়াবেটিস হলে কি আম খাওয়া যাবে সেই সম্পর্কে বলা নেই এর পাশাপাশি ডায়াবেটিস কি, ডায়াবেটিস কেন হয়, ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ ও এ ডায়াবেটিস হলে করনীয় কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ভূমিকা
ডায়াবেটিস একটি রক্তের সুগার বেড়ে যাওয়া জড়িত রোগ। ডায়াবেটিস রোগ সম্পূর্ণরূপে কোনদিন নির্মূল হয় না। ডায়াবেটিস হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে থাকতে হবে তা না হলে অন্যান্য রোগ শরীরে বাসা বেধে যেতে পারে। রক্তের সুগারের মাত্রা বেশি থাকলে রক্তনালীর ক্ষতি হয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দেয়।
ডায়াবেটিস কি ও কেন হয়
ডায়াবেটিস হলো এক ধরনের মেটাবলিক ডিসঅর্ডার। একে বহুমূত্র রোগ ও বলা হয় আমাদের শরীরে গ্লকোজের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেলে এবং আমাদের শরীরের উৎপাদিত ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ না করলে ডায়াবেটিস হয়। ডায়াবেটিস হলে আমাদের শরীরের গ্লকোজের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিস চার ধরনের হয়ে থাকে। টাইপ-১ ডায়াবেটিস, টাইপ-2 ডায়াবেটিস, জেস্টেশনাল এবং অন্যান্য। আমরা যখন কোন খাবার খাই তখন সেটার অতিরিক্ত গ্লকোজকে কমিয়ে দেওয়াই হলো ইনসুলিনের কাজ। ইনসুলিন শরীরে পযাপ্ত পরিমাণ থাকার পরও অনেক সময় কাজ করে না তখন শরীরে গ্লকোজের মাত্রা কমার পরিবর্তে বেড়ে যায়। এই শারীরিক জটিলতা কে আমরা ডায়াবেটিস বলি।
ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ
ডায়াবেটিস আমাদের শরীরের ইনসুলিনে উৎপাদন ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয় এবং রক্তে গ্লকোজের মাত্রা বৃদ্ধি করে। ডায়াবেটিস হলে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় যেগুলো দেখলে আমরা বুঝতে পারি ডায়াবেটিকস হয়েছে। ডায়াবেটিসের লক্ষণ সমূহ নিম্নরূপ-
- হঠাৎ করে শরীরের ওজন কমে যায়
- ঘন ঘন প্রস্রাব হয়
- মুখে ভেতর শুকিয়ে যাওয়া ও ঘনঘন পিপাসা লাগা
- মাথা ঝিম ধরা
- শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করা
- কেটে যাওয়া স্থান সহজে ভালো না হওয়া
- মিষ্টি খাবারের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পাওয়া
- ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া
- শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
- চোখের দৃষ্টি শক্তি কমে যাওয়া
- ক্লান্তি বোধ করা
- স্পর্শ ও ব্যথার অনুভূতি কমে যাওয়া
ডায়াবেটিস কেন হয়
যে কোন বয়সের মানুষের ডায়াবেটিস হয়ে থাকে তার মধ্যে মধ্যবয়সী ব্যক্তিরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। নিম্নোক্ত কারণে ডায়াবেটিস রোগ বেশি হয়-
- শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত বেড়ে গেলে
- বংশগত কারণে অর্থাৎ পরিবারের পূর্বের কারো ডায়াবেটিস থাকলে
- শারীরিক পরিশ্রম না করলে
- তামাকজাত দ্রব্য সেবন করলে
- মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খেলে এবং ফাইবার জাতীয় খাবার কম খেলে
- মানসিক দুশ্চিন্তা বেশি করলে
ডায়াবেটিস এর স্বাভাবিক মাত্রা
রক্তে গ্লকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাওয়ার কারণে শরীরে যে জটিলতা সৃষ্টি হয় সেটাই হলো ডায়াবেটিস। খালি পেটে পরীক্ষা করার পর গ্লকোজের মাত্রা যদি ৭ এর ওপরে আসে এবং ভরা পেটে ১১ এর উপরে আসে তাহলে ডায়াবেটিস রোগ হয়। বিভিন্ন বয়সের ব্যক্তিদের গ্লকোজের লেভেল বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন হয়। একজন শিশু গ্লকোজের মাত্রা কখন একজন মধ্যবয়সী ব্যক্তির সমান হয়না।নিচে সেই তালিকা দেখানো হলো-
ডায়াবেটিস এর স্বাভাবিক মাত্রা ৬.৯ mmol/L এর নিচে হওয়া উচিত।
ডায়াবেটিস হলে কি আম খাওয়া যাবে
ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত রোগীদের অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে ডায়াবেটিস হলে কি আম খাওয়া যাবে । আর পারলেও কতটুকু পারবে। আম মিষ্টি হওয়ায় এতে চিনি থাকে। কাচা আমে কোন চিনি থাকে না কিন্তু পাকা আমে থাকে। কাঁচা আম যত ইচ্ছা খাওয়া যায় কিন্তু পাকা আম পরিমাপ করে মেপে খেতে হয়। আমে কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন সি, শর্করা এবং পটাশিয়াম থাকে।
আরও পড়ুন: দিনে কয়টি কলা খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে জানুন
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস রোগীরা রসালো ফল আম খেতে পারবে তবে তার একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ থাকতে হবে। আমে ৬৭% ভিটামিন সি রয়েছে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে। একটি মাঝারি সাইজের আমে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকে ৫৫ যা একটি নিরাপদ ফল হিসেবে ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরের জন্য কার্যকরী।
যাদের ডায়াবেটিস রোগ আছে তাদের উচিত দিনে অর্ধেক আম খাওয়া এদের রক্তে গ্লকোজের মাত্রা ঠিক থাকে। তবে আমের জুস করে খাওয়া থেকে টুকরো করে খাওয়া বেশি ভালো। তবে খাবারের পর আম খাওয়া যাবে না যাদের রক্তে গ্লকোজের মাত্রা বেড়ে থাকে তাদের আগে গ্লকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে তারপর আম খেতে হবে
ডায়াবেটিস হলে কি মিষ্টি খাওয়া যাবে
ডায়াবেটিস হলে কি মিষ্টি খাওয়া যাবে? অনেকের ধারণা মিষ্টি খাওয়ার কারণে ডায়াবেটিস রোগ হয় কিন্তু এটি মোটেও সঠিক নয়। তবে কারো যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে তার মিষ্টি খাওয়া উচিত হবে না। তবে একেবারে মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করা যাবে না এতে শরীরে শর্করার পরিমাণ কমে যায়। তাই ডায়াবেটিস রোগীর অবশ্যই মিষ্টি খেতে পারবেন কিন্তু তা পরিমাণ মতো যাতে রক্তের গ্লকোজের মাএা বৃদ্ধি পেয়ে ডায়াবেটিস বৃদ্ধি না পাই।
ডায়াবেটিস হলে কি কলা খাওয়া যাবে
অনেকে মনে যেমন প্রশ্ন জাগে ডায়াবেটিস হলে কি আম খাওয়া যাবে তেমনি ডায়াবেটিস হলে কি কলা খাওয়া যাবে সে প্রশ্নও জাগে। পাকা কলা মোটেও ডায়াবেটিস রোগের জন্য ক্ষতিকর নয়। ডায়াবেটিস হলে পাকা কলা খাওয়া যাবে তবে শুধু কলা না খেয়ে পনিরের সঙ্গে কলা খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। পাকা কলা মিষ্টি হলেও এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর নয় বরং কলা শরীরে শক্তির সঞ্চার করে। তবে বেশি বেশি পাকাকলা খাওয়া যাবে না পরিমাণ মতো খেতে হবে।
পাকা কলার তুলনায় কাচা কলা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশি উপকারী। আমরা কাঁচা কলার ভর্তা করে খেতে পারি এটি আমাদের শরীরের আয়রন লেভেল কে বৃদ্ধি করে।
ডায়াবেটিস হলে করণীয় কি
একবার ডায়াবেটিস হয়ে গেলে তা আর কখনো সম্পূর্ণরূপে ভালো হয় না। সঠিক নিয়ম এবং চিকিৎসার মধ্যে থাকলে ডায়াবেটিসের জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ডায়াবেটিস হলে কি আম খাওয়া যাবে সেটি আমরা জেনেছি। এবার সুস্থ জীবন যাপন করার জন্য একজন ডায়াবেটিস রোগীকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে-
- কিছুদিন পর পর রক্তে গ্লকোজের পরিমাণ পরীক্ষা করে দেখতে হবে
- ব্লাড প্রেসার এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
- কিডনির বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে
- চোখের জন্য সচেতনতা বজায় রাখতে হবে
- ধূমপান করা যাবে না
- রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা চেক করতে হবে
- হাত ও পায়ের যত্ন নিতে হবে
- শরীরের কোন অংশ যেন ক্ষত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে
লেখক এর মন্তব্য
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থেকে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি ডায়াবেটিস হলে কি আম খাওয়া যাবে সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন। আরও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। এরকম আরো পোস্ট পেতে অবশ্যই আপনার মতামত কমেন্ট বক্সে জানাবেন।
অভ্রটেকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url