শিশুর জ্বর হলে সিরাপ নাকি সাপোজিটার
শিশুর জ্বর হলে সিরাপ নাকি সাপোজিটার কোনটা ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেন না। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমার এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি সকল তথ্য জানতে পারবেন। এখানে শিশুদের জ্বর কমানোর দোয়া সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে।আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন আশা করি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে শুরু করলে সেই উচ্চ তাপমাত্রাকে জ্বর বলে। মানুষের দেহে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। শরীরের তাপমাত্রা এর চেয়ে বেশি হলে জ্বর হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এটি আসলে রোগের একটি পূর্ব লক্ষণ যা আমাদের শরীরের জন্য সতর্ক বার্তা।
জ্বর কি? জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গ
আমাদের শরীরে যখন কোন জীবাণু আক্রমণ করে তখন আমাদের শরীরের বিভিন্ন কোষ থেকে পাইরোজেন নামক এক ধরনের পদার্থ নিঃসৃত হয়ে তাপমাত্রার বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলে যার কারণে আমাদের শরীরে জ্বর অনুভূত হয়। জ্বর কোন অস্বাভাবিক অসুখ নয়। অনেকে জ্বর হলে ভয় পেয়ে যায়।
একজন সুস্থ বাচ্চা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লে বাবা-মা অনেক উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কিন্তু এমন অবস্থায় উদ্বিগ্ন হয়ে কান্নাকাটি করলে বাচ্চা আরো ভয় পেয়ে যায় তাই মা-বাবার উচিত এই সময় শান্ত থেকে বাচ্চা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। সাধারণত দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেলে সেটিকে আমরা জ্বর বলে থাকি।
এছাড়া জ্বর হয়েছে কিনা সেটা বুঝার অনেক লক্ষণ রয়েছে। জ্বর হলে শরীর অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে, কোন কাজ করতে ভালো লাগেনা শরীরে কোন প্রকার শক্তি থাকে না। শরীরে ব্যথা অনুভূত হয়, মাথা ভারী হয়ে আসে, ঘুম ঘুম ভাব লাগে। মাথাব্যথা ও ঘুমের কারণে ঠিকমতো দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। কোন কিছু খেতে ভালো লাগে না ক্ষুধা-মন্দা দেখা দেয়।
খাবার খেতে গেলে সেই খাবার তিতা মনে হয়। কোন কাজে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। উক্ত লক্ষণ দেখা দিলে বুঝে নিতে হবে জ্বর হয়েছে। নিশ্চিত হওয়ার জন্য থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপতে হবে।
বাচ্চাদের হঠাৎ জ্বর হলে করণীয়
জ্বর হলে শরীর গরম থাকে তাই জ্বর কমাতে হলে আগে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। জ্বর হলে আমাদের স্বাভাবিকের চেয়ে কর্মক্ষমতা অনেক কমে যায়, শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় আমাদের উচিত শুয়ে বিশ্রাম করা। জ্বর হলে ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীর ভালোভাবে মুছে দিতে হবে এতে শরীর ঠান্ডা হয় এবং দেহে আরাম অনুভূত হয়।
জ্বর হয়েছে বলে মোটা কাপড় কম্বল দিয়ে বাচ্চাকে ঢেকে রাখলে হবে না এতে বাচ্চাদের জ্বর এবং অস্বস্তি দুইটাই বেড়ে যায়। তাই জ্বর হলে হালকা সুতি পোশাক পরিয়ে রাখতে হবে। যে ঘরে বাচ্চাকে রাখা হবে সে ঘরে পরিপূর্ণ আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। শরীরে যেন কোনভাবে পানি শূন্যতা সৃষ্টি না হয় সেজন্য শিশুকে বারবার তরল খাবার খাওয়াতে হবে।
বিশেষ করে ফলের রস, ডাবের পানি, স্যুপ ইত্যাদি। এতে পানি শূন্যতা সমস্যা যেমন দূর হবে তেমনি শরীরে শক্তির সঞ্চারও হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া শিশুকে কোন প্রকার ওষধ দেওয়া যাবে না। প্রথমে ঘরোয়া পদ্ধতিতে চেষ্টা করতে হবে তারপরও জ্বর না কমলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ
ভাইরাস হলো অতি ক্ষুদ্র সংক্রামক যা শুধুমাত্র একটি জীবন্ত কোষের অভ্যন্তরে বংশবৃদ্ধি করতে পারে। বিভিন্ন ভাইরাসের কারণে আমাদের জ্বর হয়ে থাকে যেমন: ডেঙ্গু জ্বর, টাইফয়েড, চিকনগুনিয়া, নিউমোনিয়া ইত্যাদি। সারা বছর ভাইরাস জ্বরে আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকলেও সাধারণত গ্রীষ্মকালে এর পাদুর্ভাব বেশি থাকে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এমনটা হয়ে থাকে। ভাইরাস জ্বরের লক্ষণগুলো নিম্নরূপ:
- চোখ লাল হয়ে যাওয়া
- প্রচন্ড মাথা ব্যথা করা
- খাবারে অরুচি, মুখে বিস্বাদ লাগা
- হাঁচি, কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া
- সারা শরীরে ও হাতে-পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করা
- বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া
- শরীরের চামড়ায় বা ত্বকের র্যাশ দেখা যাওয়া
- শীত শীত অনুভূত হওয়া এবং ঘাম দিয়ে জ্বর আসা
- শিশুদের অতিরিক্ত জ্বরের কারণে কখনো কখনো খিঁচুনি হতে পারে
ভাইরাস জ্বর হলে করণীয়
শিশুরা সাধারণত ভাইরাস জ্বরে বেশি আক্রান্ত হয়। ভাইরাস দ্বারা কখন কিভাবে শিশুরা আক্রান্ত হয় তা বলা যেতে পারে না। শিশুরা অনেক সময় খেলতে গিয়ে বাইরে ঘুরতে গিয়ে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়। ভাইরাস দ্বারা শিশুদের আক্রান্তের কারণে তাদের নামা শারীরিক জটিলতার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে হয়। শিশুরা ভাইরাস জ্বর দ্বারা আক্রান্ত হলে আমাদের নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করতে হবে-
- মাথায় পানি ঢালতে হবে;
- জ্বর যাতে তাড়াতাড়ি কমে যায় সেজন্য একটা গামছা কে হালকা কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে সারা শরীরকে ভালো করে মুছে দিতে হবে;
- ফ্যানের নিচে শুয়ে রাখতে হবে;
- জ্বর ও শরীরের ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে এবং জ্বর যদি ১০২° ফারেনহাইট এর বেশি হয় তাহলে মলদ্বারের সাপোজিটার ব্যবহার করতে হবে;
- শরীরে যেন পানি শূন্যতা সৃষ্টি না হয় সেই জন্য খাবার স্যালাইন, ফলের রস, শরবত ইত্যাদি তরল খাবার বেশি বেশি খাওয়াতে হবে;
- স্বাভাবিক খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়াতে হবে তবে তরল খাবার অবশ্যই বেশি বেশি করে খাওয়াতে হবে। এতে শরীর সুস্থ সবল থাকবে এবং শক্তি সঞ্চয় হবে;
- টক জাতীয় ফল যেমন কমলা, লেবু, আমরা, জাম্বুরা, কামরাঙ্গা ইত্যাদি খাওয়াতে হবে।
শিশুদের জ্বর কমানোর দোয়া
জ্বর আল্লাহতালার পক্ষ থেকে একটি নিয়ামত। জ্বর হওয়ার মাধ্যমে শরীরের সমস্ত রোগ জীবাণু মিটে যায়। জ্বর হলে আমাদের শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে আমরা কোনরকম শক্তি পায় না এ অবস্থায় আমরা আল্লাহতালার কাছে আমাদের সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করে থাকি। অনেকে আবার শিশুর জ্বর হলে সিরাপ নাকি সাপোজিটার ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে জানতে চায়। জ্বর হলে আমরা নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহর কাছ রোগ মুক্তির পরিত্রাণ চাইবো। শিশুদের জ্বর কমানোর দোয়া নিম্নরূপ:
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহিল কাবিরি, আউজু বিল্লাহিল আজিমি মিন শাররি কুল্লি ইরকিন না’আরিন ওয়া মিন শাররি হারারিন নারি।
অর্থ: মহান আল্লাহর নামে আমি মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি রক্তচাপের আক্রমণ থেকে এবং জাহান্নামের উত্তপ্ত আগুনের মন্দ প্রভাব থেকে।
শিশুর জ্বর হলে সিরাপ নাকি সাপোজিটার
মানুষের দেহে স্বাভাবিক তাপমাত্রা তুলনায় যদি দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় তাহলে জ্বর হয়েছে বলে আমরা ধরে থাকি। জ্বর হলে আমাদের দেহে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এ সময় আমাদের ঘরোয়া পদ্ধতিতে চেষ্টা করতে হবে জ্বর কমানোর। তারপরও যদি আমাদের জ্বর না কমে তাহলে আমাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে।
সাধারণত ১০২° ফারেনহাইট এর নিচে জ্বর থাকলে আমাদের প্যারাসিটামল ওষুধ খেলে জ্বর কমে যাওয়ার কথা কিন্তু ১০২° এর ওপরে জ্বর থাকলে যদি জ্বর না কমে তাহলে আমাদের মলদ্বারের মাধ্যমে সাপোজিটার প্রয়োগ করতে হবে। অনেক সময় শিশুরা জ্বরের কারণে এতটা দুর্বল হয়ে পড়ে যে তারা কোন ওষুধ খেতে পারে না। সেই সময় মলদ্বারের মাধ্যমে সাপোজিটার প্রয়োগ করলে শিশুর জ্বর অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
এরপর জ্বর যখন কমে যাবে তখন তাকে সিরাপ খাইয়ে জ্বর ভালো করতে হবে রেগুলার সাপোজিটার দেওয়ার কোন দরকার নেই অতিরিক্ত জর হলে সাপোজিটার দিতে হবে। এটা দেওয়া কোন সমাধান নয় যদি কোন উপায় না থাকে ওষুধ খাওয়ানোর এবং জ্বরের মাত্র যদি বেশি থাকে তাহলেই সেক্ষেত্রে সাপোজিটার ব্যবহার করতে হবে। তাহলে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন শিশুর জ্বর হলে সিরাপ নাকি সাপোজিটার দিবেন।
লেখকের মন্তব্য
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থেকে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি শিশুর জ্বর হলে সিরাপ নাকি সাপোজিটার ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন। আরো তথ্য পেতে আমার ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। এরকম আরো পোস্ট পেতে অবশ্যই আপনার মতামত কমেন্ট বক্সে জানাবেন।
অভ্রটেকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url