শিশুদের দাঁত না ওঠলে করণীয়

শিশুদের দাঁত না উঠলে করণীয় কি সেই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেন না। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমার আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি সকল তথ্য জানতে পারবেন। এখানে শিশুদের দাঁত ওঠার সময় ডায়রিয়া হওয়ার সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন আশা করি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

এখানে শুধুমাত্র শিশুদের দাঁত না উঠলে করণীয় কি সেই সম্পর্কে বলা নেই এর পাশাপাশি কোনটির অভাবে শিশুদের দাঁত উঠতে দেরি হয়, শিশুদের দাঁত ওঠার সময় জ্বর ও শিশুদের দাঁত ওঠার লক্ষণ সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে।

ভূমিকা

জন্মের পর শিশুদের প্রথম যে দাঁত বের হয় তাকে দুধ দাঁত বলে। এই দুধ দাঁত স্থায়ী নয়। এই দুধ দাঁত পড়ে শিশুদের আবার নতুন করে দাঁত বের হয়। ছোটবেলা থেকে শিশুদের দাঁতের যত্ন নিতে হবে এতে করে দাঁত শক্ত ও মজবুত হবে। শিশুদের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি তাদের দাঁতের ও খেয়াল রাখতে হবে।

শিশুদের দাঁত ওঠার সঠিক সময়

পরিণত বয়সে একজন মানুষের ৩২ টি দাঁত থাকে। কিন্তু জন্মের পর থেকে মানুষের ৩২ টি দাঁত থাকে না। একটা নির্দিষ্ট সময় পর দাঁত বের হয়। জন্মের পর ছোট বয়সী শিশুদের কোন দাঁত থাকে না। জন্মের পর শিশুদের যে দাঁত বের হয় সে তাকে দুধ দাঁত বলে। একজন স্বাভাবিক শিশুর সাধারণত ছয় মাস থেকে চব্বিশ মাস বয়স পর্যন্ত দুধ দাঁত বের হয়। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঘটে। 

কোন কোন শিশুর তিন থেকে ১৪ মাস বয়সে দুধ দাঁত বের হয়ে যায়। দাঁত ওঠার সময় শিশুর আচরণে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। দাঁত বের হওয়ার সময় শিশুর মাড়িতে চাপ পড়ে যার কারণে অনেক সময় মাড়ি ফুলের লাল হয়ে যা। যার কারণে শিশুরা কিছুটা রাগান্বিত হয়ে থাকে এবং শরীরে অস্বস্তি অনুভব করে। 

মাড়িতে দাঁত বের হওয়ার কারণে সুড়সড় করে তাই শিশুরা সামনে যা পায় তা কামড়ানোর চেষ্টা করে।যেহেতু রাতে দাঁত বেশি বৃদ্ধি পায় তাই শিশুরা রাতে বেশি অস্বস্তি অনুভব করে। দাঁত বের হওয়ার কারণে শিশুদের ব্যথা অনুভূত হয় অনেক সময় এই ব্যথা কান পর্যন্ত চলে যায়। যার কারণে শিশুরা বারবার কানে হাত দেয়।

শিশুদের দাঁত ওঠার লক্ষণ

শিশুর দাঁত ওঠার লক্ষণ কারো কারো ক্ষেত্রে বুঝা যায় আবার কারো কারো ক্ষেত্রে বোঝা যায় না। সাধারণত ৬ থেকে ১২ মাস বয়সী শিশুদের দাঁত ওঠে যায়। শিশুদের এ দাঁত কে দুধদাত বলে। এই দাঁত স্থায়ী নয়। ছয় থেকে সাত বছর বয়স হলে শিশুদের সব দাঁত পড়ে গিয়ে স্থায়ী দাঁত ওঠে। পরিপূর্ণ দাঁত অর্থাৎ ৩২ টি দাঁত বের হতে অনেক বছর লেগে যায়। প্রথমে ২০ টি দুধ দাঁত বের হয় যা বেরুতে দুই থেকে তিন বছর সময় লাগে। শিশুদের দাঁত ওঠার লক্ষণ নিম্নরূপ:

হালকা জ্বর: শিশুদের দাঁত ওঠার সময় শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। তবে এটি কখনোই ১০১ ডিগ্রি এর চেয়ে বেশি হয় না। ১০১ ডিগ্রি এর চেয়ে বেশি জ্বর হলে শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে সঠিক চিকিৎসা করাতে হবে।

মাড়ি ফোলা: দাঁত বের হলে শিশুদের মাড়িতে চাপ পড়ে যার কারণে মাড়ির যে স্থানে দাঁত বের হয় সেই স্থান লাল হয়ে ফুলে যায়। মাড়ি ফোলার কারণে ব্যথা হয়।

খেতে না চাওয়া: এই সময় মাড়ি ব্যথা করার কারণে শিশুরা ভালো করে কোন কিছু খেতে চায় না। শিশুরা শরীরে একটা অস্বস্তি অনুভব করে। তাই আমাদের উচিত শিশুদের তরল ও পুষ্টি সমৃদ্ধ গলানো খাবার খাওয়ানো।

চেবানো: শিশুদের দাঁত ওঠার সময় মাড়িতে ব্যাথার কারণে তারা অস্বস্তি অনুভব করে এবং সামনে যা দেখে সেটা চেবানোর চেষ্টা করে। এমন সময় হাত পরিষ্কার করে ধুয়ে শিশুদের মাড়িতে মালিশ করে নিতে হবে। এতে শিশু কিছুটা আরাম অনুভব করবে।

মুখ থেকে বেশি লালা ঝরা: দাঁত ওঠার সময় শিশুদের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি লালা পরে কারণ বেশি লালা পড়লে মাড়ি আর্দ্র থাকে এবং শিশুরা আরাম অনুভব করে।

ঠিকমতো না ঘুমানো: দাঁত উঠলে মাড়িতে ব্যথা করে যার কারণে শিশুরা শরীরে অস্বস্তি অনুভব করে তারা ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না। কিছুক্ষণ পর পর কান্না করে একটুতেই বিরক্ত হয়ে যায়।

বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় জ্বর

অনেকের ধারণার দাঁত ওঠার সময় শিশুদের জ্বর হয় কিন্তু বাস্তবে এর কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। সাধারণত শিশুদের দাঁত বের হলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি বেড়ে যায়। এই তাপমাত্রা কখনোই ১০১ ডিগ্রি এর চেয়ে বেশি হয় না। যদি বেশি হয় তাহলে ধরে নিতে হবে অন্য কোন কারণে শিশুর জ্বর হয়েছে। এমন সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। 


শিশুদের দাঁত বের হওয়ার সময় দাঁত মাড়ি ছিড়ে বাইরের বের হয়ে আসে যার কারণে মাড়ি লাল হয়ে ‍ফুলে যায় এবং শিশুরা ব্যথা অনুভব করে। আবার মাড়ি ছিড়ে দাঁত বের হয়ে আসার সময় কিছু সংখ্যক ব্যাকটেরিয়া শিশুর রক্তে প্রবেশ করে। এই ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে যখন মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে তখন শরীরের জ্বর আসে। 

দাঁত ওঠার কারণে শিশুদের যে জ্বর হয় তা দুই দিনের বেশি স্থায়ী হয় না। তবে জ্বর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

শিশুর দাঁত না ওঠলে করণীয়

জন্মের ৬ থেকে ২৪ মাসের মধ্যে শিশুদের যে দাঁত উঠে তাকে দুধ দাত বলে। সাধারণত ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে শিশুদের এ দাঁত বের হয়ে যায়। তবে ১৫ থেকে ১৮ মাসের মধ্যেও যদি এই দাঁত না বের হয় তাহলে তা চিন্তার বিষয় হয়ে যায়। এমতাবস্থায় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। বিভিন্ন কারণে শিশুদের সময় মতো দাঁত ওঠে না। 

জেনেটিক্যাল সমস্যার কারণে অর্থাৎ পরিবারের কারো যদি দেরিতে দাঁত বের হওয়ার ইতিহাস থাকে তাহলে শিশুর দাঁত বের হতে সময় লাগে। আবার শিশু যদি ১০ মাসের পূর্বে জন্মগ্রহণ করে এবং জন্মের পর শিশুর ওজন যদি স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে তাহলে সে শিশুর দাঁতের এনামেলের ত্রুটি থাকতে পারে। এরকম শিশুদের দাঁত অন্যান্য শিশুদের চেয়ে ‍দেরিতে ওঠে। অপুষ্টি অর্থাৎ ভিটামিন এর অভাবে বিশেষ করে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের অভাবের কারণে সঠিক সময় দাঁত ওঠেনা।

শিশুদের দাঁত ওঠার সময় ডায়রিয়া

দাঁত ওঠার সময় শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়া লক্ষণ দেখা দেয়। তবে দাঁত উঠলেই যে ডায়রিয়া হবে এর কোন যুক্তি বা প্রমাণ নেই। দাঁত ওঠার সময় শিশুদের মুখ থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি লালা উৎপন্ন হয় যা গ্যাস্ট্রিক সিস্টেমের ভারসাম্যের ব্যাঘাত ঘটায় যার ফল স্বরূপ ডায়রিয়া হয়। তবে এটিকে ডায়রিয়া হওয়ার সঠিক কারণ বলা যায় না। 

দাঁত ওঠার সময় শিশুর মাড়িতে চাপ পড়ে যার কারণে তারা সামনে যা পায় সেদিকে কামড়ানোর চেষ্টা করে। এসব জিনিস সবসময় পরিষ্কার নাও থাকতে পারে। এদের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে যার কারণে শিশুর ডায়রিয়া হতে পারে। ডায়রিয়া হলে অবশ্যই শিশুকে খাবার স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ খাওয়াতে হবে এবং সময়মতো ডাক্তারের দেখাতে হবে।

শিশুর ডায়রিয়া যেন না হয় এজন্য সব সময় শিশুর আশেপাশের সবকিছু পরিষ্কার রাখতে হবে। শিশুদের দাঁত ওঠার সময় ডায়রিয়া হলে এটি এক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। তাই ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

কোনটির অভাবে শিশুদের দাঁত ওঠতে দেরি হয়

জন্মের সময় বাচ্চাদের কোন দাঁত থাকে না। সাধারণত ৬ মাস বয়স থেকে বাচ্চাদের দাঁত বের হয় যা ৬ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে ওঠে যায়। তবে সবার এই সময় যে ওঠে এটা ঠিক না। কারো কারো ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা যায়। আর এ ব্যতিক্রমের নানা কারণ রয়েছে তার মধ্যে একটি হলো অপুষ্টি ও ভিটামিনের অভাব। 

শিশুদের ভিটামিনের অভাবের কারণে সঠিক সময় দাঁত ওঠেনা। বিশেষ করে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম এর অভাবে এই সমস্যা বেশি হয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য শিশুকে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে। বাচ্চার শরীরের সকালের মিষ্টি রোদ লাগাতে হবে।

লেখক এর মন্তব্য

এতক্ষন আমাদের সঙ্গে থেকে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি শিশুদের দাঁত না উঠলে করণীয় কি সেটি সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন। আরও তথ্য পেতে আমার ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করুন। আর্টিকেলটি পড়ে আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। এরকম আরো পোস্ট পেতে অবশ্যই আপনার মতামত কমেন্ট বক্সে জানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অভ্রটেকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url