ব্যাথা মুক্ত নরমাল ডেলিভারির খরচ
ব্যাথা মুক্ত নরমাল ডেলিভারির খরচ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেন না। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমার এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি সকল তথ্য জানতে পারবেন। এথানে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার ব্যায়াম সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন আশা করি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
এখানে শুধুমাত্র নরমাল ডেলিভারি সম্পর্কে লেখা নেই এর পাশাপাশি ব্যাথা মুক্ত নরমাল ডেলিভারির খরচ, নরমাল ডেলিভারি কিভাবে হয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ভূমিকা
একজন মহিলা গর্ভবতী হওয়ার শুরু থেকে ডেলিভারি হওয়ার শেষ সময় পর্যন্ত কত কিছুই না চিন্তা করে থাকে। মা হতে পারাটা প্রত্যেক নারীর জন্য একটা আনন্দের বিষয়। সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে একজন নারী পরিপূর্ণ হয়। এই আদরের সন্তানকে ভূমিষ্ঠ করতে মায়েদের কি নিদারুন কষ্টটাই না সহ্য করতে হয়। একজন মা দশ মাস দশ দিন একটি সন্তানকে তার গর্ভে ধারণ করে।
গর্ভধারণ থেকে শেষ সময় পর্যন্ত সে অনেক ভয় আর চিন্তায় থাকে তার মধ্যে প্রধান চিন্তা হচ্ছে ডেলিভারি নিয়ে। সবার শরীরের নরমাল ডেলিভারি করার মত শক্তি থাকে না। তখন তাদের সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসব করতে হয়। এতে অনেক কষ্ট ও ঝুঁকি থাকে। তাই সকলে চেষ্টা করে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে বাচ্চা প্রসব করার। তাছাড়া ব্যাথা মুক্ত নরমাল ডেলিভারির খরচ সিজারিয়ান অপারেশন এর চেয়ে কম।
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সময়
একজন গর্ভবতী মহিলার ডেলিভারি সাধারণত দুই ভাবে হয়ে থাকে। একটা হলো নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে এবং অপরটি হলো সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে। সিজারিয়ান অপারেশন এর তুলনায় নরমাল ডেলিভারিতে কষ্ট অনেক কম হয়। অপারেশন করলে ডেলিভারি পরবর্তী সময়ে নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। এজন্য সকলে নরমাল ডেলিভারি করতে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে।
একটা শিশু তার মায়ের পেটে ১০ মাস ১০ দিন থাকে। সাধারণত নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সময় আমরা তখনই বলে থাকি যখন শিশু গর্ভাবস্থার ৩৭ তম সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার পর জন্মায়। এর আগে যদি কোন শিশু জন্মগ্রহণ করে তাহলে তাকে আমরা প্রিম্যাচিউর বেবি বলে থাকি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৩৭ তম থেকে ৪২ তম সপ্তাহের মধ্যে নরমাল ডেলিভারি যদি হয় তবে তা মা ও তার গর্ভের শিশুর জন্য অধিক নিরাপদ ।
বাচ্চার ওজন কত হলে নরমাল ডেলিভারি হয়
একজন বাচ্চার ওজন কত হলে নরমাল ডেলিভারি হয় সেই প্রশ্ন আমাদের অনেকের মনেই জাগে। চিকিৎসকদের মতে, একজন বাচ্চার ওজন যদি ২.৫ থেকে ৪ কেজি এর মধ্যে হয় তাহলে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব। একজন বাচ্চার ওজন যদি ২.৫ কেজি এর নিচে হয় তাহলে সেই বাচ্চা বেশি স্ট্রেসে থাকে তাকে নরমাল ডেলিভারি করে বের করা সম্ভব না। এতে নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। এমন অবস্থা হলে সিজার করতে হয়।
আবার কোন বাচ্চার ওজন যদি ৪ কেজি এর ওপরে হয় তাহলেও নরমাল ডেলিভারি সম্ভব নয় কারণ ভৌগোলিক অবস্থার কারণে মেয়েদের পেলভিস ও জরায়ু এতটা প্রশস্ত হয় না যে ৪ কেজি এর উপরের বেবীর নরমালি ডেলিভারি সম্ভব এক্ষেত্রে সিজার ছাড়া কোন উপায় থাকে না। তাই নরমাল ডেলিভারি হতে হলে বাচ্চার ওজন অবশ্যই ২.৫ থেকে ৪ কেজি এর মধ্যে হতে হবে এর চেয়ে কম বা বেশি হলে হবে না।
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার ব্যায়াম
গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। ব্যায়াম শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখে। একজন গর্ভবতী নারী যদি গর্ভকালীন সময় ব্যায়াম করে তাহলে তার শরীরে ঠিকমতো রক্ত সঞ্চালন হয়, শরীর ও মন ভালো থাকে। গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ, এক্লাম্পসিয়া ও ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি থাকে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে নানা শারিরীক জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
তবে এই সময় ভারী কোন ব্যায়াম করা যাবে না এতে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। তাই ওই সময় হালকা ব্যায়াম করতে হবে শরীরে অতিরিক্ত প্রেসার দেওয়া যাবে না। এই সময় হাঁটাহাঁটি করতে হবে, বাগানে গাছে পানি দিতে হবে, বেশি ভালো হয় যদি নিয়মিত ইয়োগা করতে পারে। ইয়োগা শরীরের জন্য অনেক উপকারে বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য। নরমাল ডেলিভারি হওয়ার ব্যায়াম করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
নরমাল ডেলিভারি কিভাবে হয়
আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের জীবনযাত্রার মানকে অনেক সহজ করে তুলেছে। ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি সেরকমই একটি সুবিধা। নরমাল ডেলিভারির সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ব্যথা। অনেকেই এই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে সিজারিয়ান অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই ব্যথার কারণে অনেক গর্ভবতী নারী নরমাল ডেলিভারি করতে ভয় পাই।
নরমাল ডেলিভারির জন্য ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে পেরিনিয়াল ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে যোনি পথের ২-৩ সেন্টিমিটার ভেতরে আঙ্গুল ঢুকিয়ে যোনি ও পায়ুর মাঝামাঝিতে ম্যাসাজ করা হয়। এছাড়া ব্যাথা মুক্ত নরমাল ডেলিভারির খরচ অনেক কম তাই সকলে এটি করতেই বেশি আগ্রহী।
নরমাল ডেলিভারির জন্য কোন খাবার খাওয়া ভালো
অনেকের ধারণা গর্ভধারণ করলে বেশি বেশি করে খাবার খেতে হয় কিন্তু এটা ঠিক নয় শুধু বেশি পরিমাণে খাবার খেলেই হয় না সেই খাবার হতে হবে অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন যা শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। অনেকের প্রশ্ন নরমাল ডেলিভারির জন্য কোন খাবার খাওয়া ভালো। খেজুর খাওয়া শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এতে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন সকালে খেজুর খেতে হবে খেজুর খেলে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন: খালি পেটে মধু খাওয়ার উপকারিতা
এছাড়াও যে সকল মহিলারা কনসিভ করার চেষ্টা করছে তারা যদি নিয়মিত খেজুর খায় তাহলে এর উপকারিতা পাবে। খেজুর খাওয়ার পাশাপাশি কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম, কিসমিস খেতে হবে। প্রতিদিন রাতে একগ্লাস করে গরম দুধ খেতে হবে। দুধে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে এতে বাচ্চা এবং মা দুজনই সুস্থ থাকবে।
আরও পড়ুন: তরমুজ খেলে কি হয়?
নিয়মিত সবুজ শাকসবজি খেতে হবে এবং ফলমূল খেতে হবে প্রতিদিন একটা করে কলা, আপেল, কমলা এবং আঙ্গুর খেতে হবে। যে সকল ফলে মিনারেলস রয়েছে এবং খনিজ পদার্থ পরিপূর্ণ রয়েছে এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ সেই সকল খাবার খেতে হবে এতে মা ও বাচ্চা দুজনেই সুস্থ থাকবে এবং বাচ্চার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটবে।
নরমাল ডেলিভারির ব্যাথা কেমন
নরমাল ডেলিভারির প্রধান সমস্যা হচ্ছে এতে গর্ভবতীকে অনেক ব্যথা সহ্য করতে হয়। নরমাল ডেলিভারির ব্যাথা কেমন সেটা কেবল সেই বুঝতে পারে যে এটা সহ্য করেছে। ডেলিভারির সময় ঘনিয়ে আসলে প্রথমে খিঁচুনিযুক্ত পেট ব্যথা শুরু হয় এরপর পেট থেকে পিট দিয়ে ব্যথা শুরু হয় যা প্রায় আধা মিনিট স্থায়ী হয় এবং ১০-৩০ মিনিট পরপর চলতে থাকে আরো তীব্র হয় এবং সময়ের সাথে তা আরো ঘন ঘন হতে থাকে। এরপর সংকোচন এর সাথে সাথে চাপ দেখা দেয়।
ব্যাথা মুক্ত নরমাল ডেলিভারির খরচ
সিজারিয়ান ডেলিভারি তুলনায় নরমাল ডেলিভারিতে খরচ কম হয়। বাংলাদেশের সিজারিয়ান ডেলিভারিতে গড়ে খরচ হয় বিশ হাজার টাকা যেখানে নরমাল ডেলিভারিতে ৫হাজারেই হয়ে যায়। তাই ব্যাথা মুক্ত নরমাল ডেলিভারির খরচ অনেক কম তাই এটি করতে অনেকেই আগ্রহী হয়। ব্যাথা মুক্ত নরমাল ডেলিভারির খরচ কম হওয়ায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এটি বহন করতে পারে।
ফলস লেবার পেইন বোঝার উপায়
গর্ভাবস্থায় অনেকেরই ফলস পেইন উঠে। তখন মনে হয় যে এটি লেবার পেইন কিন্তু আসলে এটি লেবার পেইন নয়। এটি আসলে ফলস পেইন। ফলস লেবার পেইন বোঝার উপায় রয়েছে অনেক পেটে মৃদু টান দিয়ে যদি গর্ভাবস্থা শেষের দিকে তলপেটে ব্যথা হয় মাঝে মধ্যে হঠাৎ টান অনুভূত হয় তখন মনে হয় যে এটি লেবার পেইন কিন্তু একটি লেবার নয় এইটা সাধারণত অনিয়মিত ভাবে দেখা দেয় এবং খুব বেশি সময়ের জন্য স্থায়ী হয় না।
লেখকের মন্তব্য:
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থেকে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি ব্যাথা মুক্ত নরমাল ডেলিভারির খরচ সম্পর্কে আপনি সঠিক ধারণা পেয়েছেন। আরো তথ্য পেতে আমার ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। এরকম আরো পোস্ট পেতে অবশ্যই আপনার মতামত কমেন্ট বক্সে জানাবেন।
অভ্রটেকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url