রুট ক্যানেল কতদিন স্থায়ী হয়


রুট ক্যানেল কতদিন স্থায়ী হয় সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেন না। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমার আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি সকল তথ্য জানতে পারবেন। এখানে রুট ক্যানেল করতে ব্যথা কেমন হয় সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন আশা করি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

এখানে শুধুমাত্র রুট ক্যানেল কতদিন স্থায়ী হয় সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়নি এর পাশাপাশি রুট ক্যানেল করার নিয়ম, রুট ক্যানেল করে ক্ষতিকর দিক এবং দাঁত ব্যথা হলে ফিলিং না রুট ক্যানেল করব সে সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে।

ভূমিকা

দাঁতের ক্ষয় একটি কমন সমস্যা। ঠিকমতো দাঁতের যত্ন না নিলে আমাদের দাঁত জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়। জীবাণুর আক্রমণের কারণে আমাদের দাঁতে ক্ষত হয় এবং আমরা তীব্র ব্যথা অনুভব করি। দাঁতের ক্ষয় রোধ করার জন্য আমাদের দাঁতের খেয়াল রাখতে হবে। নিয়মিত ব্রাশ করতে হবে। দাঁতে ক্ষত হয়ে গেলে সে ক্ষত দূর করার জন্য দাঁতে রুট ক্যানেল করতে হবে।

রুট ক্যানেল কেন করা হয়

দাঁত আমাদের মানবদেহের একটি মূল্যবান অংশ। আমাদের শরীরের প্রত্যেকটি অংশের গুরুত্ব সমান। দাঁতের সাহায্যে আমরা খাদ্যদ্রব্য চর্বন করে থাকি। তাই আমাদের উচিত আমাদের দাঁতের বিশেষ যত্ন নেওয়া। কিন্তু অনেকে অলসতার কারণে আবার অনেকে খামখেয়ালি করে ঠিকমত দাঁতের যত্ন নেয় না। এতে আমাদের দাঁতে জীবাণু সংক্রমণ ঘটে যাকে আমরা দাঁতে পোকা লেগেছে বলে থাকি। 

এই সংক্রমণ মাঝে মাঝে এতটাই বেড়ে যায় যে আমাদের দাঁতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। খাবার খাওয়ার, কথা বলা মুশকিল হয়ে যায় তখন আমাদের ডাক্তারদের শরণাপন্ন হতে হয়। ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমাদের পরামর্শ দেন আমাদের কি করা উচিত। যদি আমাদের দাঁতের মজ্জাস্তর ফাঁকা হয়ে যায়, খাল হয়ে এর মধ্যে জীবাণু সংক্রমণ ঘটে তখন ডাক্তার আমাদের রুট ক্যানেল করার পরামর্শ দেন। 

রুট ক্যানেল কে এন্টোডেন্টিক থেরাপি বলা হয়। এটি এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যাতে নষ্ট হয়ে যাওয়া অংশগুলো অপসারণ করা হয়, দাঁতকে জীবাণুমুক্ত করা হয়, দাঁতের ভেতরের অংশ পরিষ্কার করে সংক্রমিত ক্যানেলগুলোকে দ্রবণ (গাটাপার্চা, ইপোক্সি রঞ্জন, জিংক অক্সাইড ভিত্তিক) সিমেন্ট দ্বারা ভরাট করা হয়।

রুট ক্যানেল করার নিয়ম

রুট ক্যানেল করার পূর্বে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে দাঁতের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত হতে হবে। সংক্রমিত দাঁতের আশেপাশের দাঁতের অবস্থা কেমন সেটাও জানতে হবে। দাঁতের মজ্জা এবং পার্শ্ববর্তী টিস্যুর সঠিক মাপজোক করে এন্টোডেনটিক থেরাপি প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। এটির দাঁত ও পার্শ্ববর্তী টিস্যু সংরক্ষণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে এবং দাঁতের দীর্ঘায়ু বৃদ্ধি করে। 

রুট ক্যানেলের চিকিৎসা শুরু করার পূর্বে রোগের ইতিহাস, ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা (মুখের ভিতরে এবং বাইরে) এক্সরে করে দাঁতের সার্বিক অবস্থা জানতে হবে। নিম্নেক্তো পরীক্ষাগুলোর সাহায্যে আমরা দাঁতের মজ্জা এবং আশেপাশের টিস্যুর অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারব। এগুলো হলো-

  • প্যালেপসন: এই পরীক্ষার মাধ্যমে দাঁতের ভেতরে কোথাও ফোলা ভাব আছে কিনা জানতে পারি। 
  • গতিশীলতা: এ পরীক্ষার মাধ্যমে সকেট এর ভেতর দাঁতের নড়াচড়া স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কিনা সেটা নির্ণয় করা হয়।
  • টুথ সলুথ:এই পরীক্ষা করার জন্য রোগীকে একটি প্লাস্টিকের যন্ত্রে কামড় দিতে দেওয়া হয়। কামড় দেওয়ার পর যদি ব্যথা অনুভূত হয় তাহলে তাকে স্থায়ীকরণের জন্য ব্যবহার করা হয়।
  • পার্কাসন: দাঁতটি ট্যাপ করে দেখা হয় দাঁতে কোন কোমলতা আছে কিনা।
  • ট্রান্স ইলুমিনেশন: দাঁতের ভেতর কোন ফ্র্যাকচার আছে কিনা তা নির্ণয় করার জন্য দাঁতের ভেতর আলো প্রবেশ করানো হয়।
  • রেডিওগ্রাফ
  • দাঁত মজ্জা পরীক্ষা

ক্ষয়িষ্ণু এবং ভঙ্গুর দাঁত যেন ভবিষ্যতে কোন সমস্যা সৃষ্টি না করে সেজন্য ক্ষতিগ্রস্ত মজ্জা প্রকোষ্ঠে ড্রিল করে সংক্রমিত মজ্জাকে অপসারণ করা হয়। এরপর দাঁতের ভেতর পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত করার জন্য অ্যান্টিসেপটিক ও জীবাণু নাশক ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে দাঁতের ভেতরের খাল ভরাট করার জন্য একটি নিষ্ক্রিয় ভরাট গাটাপার্চা এবং সাধারণ জিংক অক্সাইড ইউজেনল দ্বারা ভরাট করা হয়। কিছু কিছু রুট ক্যানেল ক্যানেলে গাটাপার্চা বাঁধতে ইপক্সি রঞ্জন ব্যবহার করা হয়।

দাঁতের রুট ক্যানেল কতদিন স্থায়ী হয়

ঠিকমত দাঁতের যত না নেওয়ার কারণে প্রায়ই আমাদের দাঁত জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়। আমাদের দাঁত জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হলে দাঁতের মজ্জা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং দাঁতে গর্ত হয়ে যায় যেটাকে আমরা দাঁতে পোকা লেগেছে বলে থাকি। এমতাবস্থায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে আমাদের রুট ক্যানেল করার পরামর্শ দেওয়া হয়। 


দাঁতের রুট ক্যানেল করা দন্ত চিকিৎসার একটি প্রাচীন পদ্ধতি। কিন্তু অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে দাঁতের রুট ক্যানেল কতদিন স্থায়ী হয়। রুট ক্যানেল করলে কি দাঁত ভালো হয়ে যায়। আসলে দাঁতের রুট ক্যানেল কতদিন স্থায়ী হয় তা নির্ভর করে দাঁতের সার্বিক অবস্থার ভিত্তিতে। দাঁতের রুট ক্যানেল করলে সেই দাঁতের উপর কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। 

কোন শক্ত জিনিস সেই দাঁত দিয়ে চর্বন করা যাবে না তবেই দাঁত দীর্ঘদিন স্থায়ী হবে। সাধারণত দাঁতের যত্ন নিলে এটি ২০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। সঠিক ধারণা পেতে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

রুট ক্যানেল করার পর ব্যাথা

সাধারণত জীবাণুর সংক্রমণের কারণে দাঁতের মজ্জা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গর্ত হলে সেই গর্ত ভরাট করার জন্য আমরা রুট ক্যানেল করে থাকি। তবে রুট ক্যানেল সবসময় সফল হয় না। সফল না হওয়ার কারণে রুট ক্যানেল করার পর ব্যথা অনুভূত হয়। মাঝে মাঝে এই ব্যথা অনেক তীব্র হয়। নিম্নোক্ত কারণে রুট ক্যানেল করার পরও দাঁতে ব্যথা অনুভূত হয়-
 
  • দাঁতের ভেতরে থাকা ব্যাকটেরিয়া সম্পূর্ণরূপে নির্মূল না হলে রুট ক্যানেল করার পর ব্যথা হয়।
  • দাঁতের ভেতর ফ্যাক্টর রেখে দিয়ে ভরাট করে দিলে ব্যথা অনুভূত হয়।
  • দন্ত চিকিৎসকের ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি দ্বরা আঘাত লাগার কারণে ব্যথা অনুভূত হয়।
  • রুট ক্যানেল করার পর সেই দাঁতে বেশি চাপ প্রয়োগ করলে রুট ক্যানেল ভেঙ্গে গিয়ে ব্যাথা অনুভূত হয়।
  • ঠিকমতো যত্ন না নিলে সময়মতো ব্রাশ না করলে রুট ক্যানেল ভেঙ্গে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে।

দাঁতে গর্ত হলে ফিলিং না রুট ক্যানেল

দাঁতে গর্ত হলে ডাক্তাররা সাধারণত দুটি চিকিৎসা পদ্ধতির কথা বলে থাকে। একটি হল দাঁতের ফিলিং করা আর অপরটি হল রুট ক্যানেল করা। আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে দাঁতে গর্ত হলে ফিলিং না রুট ক্যানেল কোনটি করা ভালো হবে। দাঁতের ক্ষয় বা গর্ত যদি দুইটিস্তরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে দাঁতে ফিলিং করতে হয়। এমন অবস্থায় দাঁতের এনামেল ক্ষয় হলে তেমন কোনো ব্যথা অনুভূত হয় না।

দাঁত হালকা শিনশিন করতে থাকে এমন সময় চিকিৎসক দাঁতের সার্বিক অবস্থা বুঝে ক্ষতস্থানে দাঁতের সাথে রংমিলিয়ে ফিলিং পদার্থ দিয়ে দাঁতের ক্ষয় রোধ করেন। ফিলিং এতটা নিখুঁতভাবে করা হয় যেন বোঝা না যায়। কিন্তু দাঁতের ক্ষয় যদি দুইটি স্তর ভেদ করে মজ্জাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তাহলে রুট ক্যানেল করতে হয়। 

মজ্জা খুবই সংবেদনশীল এবং এখানে প্রচুর পরিমাণে স্নায়ু রয়েছে। এই মজা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ফিলিং করলে হবে না অবশ্যই রুট ক্যানেল করতে হবে। রুট ক্যানেলে দাঁতের ওপর কৃত্রিম মুকুট বা ক্যাপ পড়ানো হয়। কারণ রুট ক্যানেল করলে দাঁতের ইলাস্টিসিটি কমে যায় ফলে ভেঙ্গে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে।

রুট ক্যানেলের খরচ

রুট ক্যানেলের খরচ সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত বেসরকারি তুলনায় সরকারিতে খরচ কম হয়অ সরকারিতে শুধুমাত্র ওষুধের খরচ লাগে ডাক্তারের ফি দেওয়া লাগে না কিন্তু বেসরকারিতে ঔষধ ডাক্তারের ফি সব দেওয়া লাগে।

  • দাঁতের ফিলিং করলে ৮০০ থেকে ১০০০ এর মধ্যে খরচ হয়
  • দাঁতে রুট ক্যানেল করলে ৩৫০০ থেকে ৪৫০০ মধ্যে খরচ হয়
  • দাঁতে ক্যাপ লাগালে ২৫০০০ থেকে ৩০০০০ মধ্যে খরচ হয়
  • দাঁত স্কেলিং করলে ১৫০০ টাকা খরচ হয়
  • নতুন দাঁত লাগালে ২০০০ টাকা খরচ হয়

লেখকের মন্তব্য

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থেকে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি রুট ক্যানেল কতদিন স্থায়ী হয় সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন। আরও তথ্য পেতে আমার ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আর্টিকেল পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। এরকম আরো পোস্ট পেতে অবশ্যই আপনার মতামত কমেন্ট বক্সে জানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অভ্রটেকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url