দিনে কয়টি কলা খাওয়া উচিত
দিনে কয়টি কলা খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেন না। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমার এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনি সকল তথ্য জানতে পারবেন । এখানে সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন আশা করি আপনার সকল প্রশ্নর উওর পেয়ে যাবেন।
এখানে শুধুমাএ দিনে কয়টি কলা খাওয়া উচিত সে সম্পর্কেই শুধু বলা নেই এর পাশাপাশি কলা খাওয়ার উপকারিতা, কলা খেলে কি ঘুম ভালো হয়, কলা খেলে কি ওজন কমে ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
ভূমিকা
কলা খেতে পছন্দ করেনা এমন মানুষ খুব কমই আছে। কলা সারাবছরই পাওয়া যায়। সাধারণত পাকা কলা খেতে মানুষ বেশি পছন্দ করে। এছাড়াও কাচা কলার তরকারি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারি। কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, গ্লকোজ, পটাশিয়াম, ফাইবার. ভিটামিন বি৬ এবং ভিটামিন সি।
অন্যান্য ফলের তুলনায় এটির দাম অনেক কম থাকায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এটি খেতে পারে। কলার অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। পুষ্টিবিদদের মতে, কলা একটি খুবই স্বাস্থ্যকর ফল। তবে কলা যেহুতু ঠান্ডা ফল তাই যাদের ঠান্ডা-সর্দির সমস্যা আছে তাদের রাতে কলা না খাওয়াই ভালো।
দিনে কয়টি কলা খাওয়া উচিত
কলা হলো এমন একটি ফল যা শর্করা ও শক্তিতে পরিপূর্ণ। কলা ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন এবং খনিজগুলির ভালো উৎস। কলায় দ্রবণীয় ফাইবার, প্রচুর কার্বোহাইড্রেট এবং কম পরিমাণে পানি থাকে। তাই কলা বেশি পরিমাণে খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিদিন আমাদের কতটি কলা খাওয়া উচিত, কতটি কলা খেলে শরীর সুস্থ্য থাকবে কিন্তু শরীরের কোন ক্ষতি হবেনা এমন প্রশ্ন প্রায়শই আমাদের মাথায় ঘুরপাক খায়।
কলা একটি সহজলভ্য ফল। প্রতিদিন ১-২ টি কলা খাওয়া শরীরের জন্য যথেষ্ট এতে আমাদের পুষ্টির চাহিদা সম্পূর্ণরূপে পূরণ হয়। এর থেকে বেশি কলা খাওয়ার প্রয়োজন নেই কারণ কলাতে প্রচুর পরিমাণে চিনি রয়েছে। অতিরিক্ত কলা খেলে রক্তে শর্করার মাএা বেড়ে যায় যার কারণে টাইপ-২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের সমস্যা হয়। এছাড়া কলাতে উচ্চ কার্বোহাইড্রেট থাকে যা খেলে শরীরে অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যায়।
সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা
নাস্তায় সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক তবে শুধু কলা খাওয়া ঠিক না এর সাথে পছন্দসই নাস্তা করে নিতে হবে। সকালে শুধু কলা খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই শুধু কলা না খেয়ে স্মুদি হিসেবে কলা খাওয়া ভালো। কলায় প্রচুর পরিমাণে ন্যাচরাল সুগার থাকে।
একটি মাঝারি আকারের কলায় প্রায় ৩ গ্রাম ফাইবার থাকে তাই খালি পেটে কলা না খেয়ে নাস্তায় অন্য খাবারের সাথে কলা খাওয়া ভালো। সকালে কলা খেলে আমাদের শরীরে পুষ্টির সঞ্চার হয়, দেহে শক্তি যোগায়। সকালে কলা খাওয়ার গুরুত্বগুলি হলো-
- কলাতে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম থাকে যা দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে;
- প্রতিদিন সকালে কলা খেলে দেহে শক্তির সঞ্চার হয়। এটিতে থাকা কার্বোহাইড্রেট শরীরের দ্রুত শক্তির উৎস;
- কলাতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
দুধ কলা একসঙ্গে খাওয়া কি শরীরের জন্য উপকারী
সুস্বাস্থ্যের জন্য দুধ এবং কলা দুইটিই উপকারি উপাদান। তবে এই দুধ-কলা একসঙ্গে খাওয়া যাবে কিনা এই নিয়ে আমাদের মনে অনেক প্রশ্ন উঠে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুধ-কলার সংমিশ্রণে তৈরি খাবার শরীরের জন্য উপকারি নয়। বিশেষ করে খালি পেটে কখনোই একসঙ্গে দুধ-কলা খাওয়া উচিত নয়। কারণ দুধ ও কলায় ভিন্ন ভিন্ন উপাদান রয়েছে।
দুধে প্রোটিন, বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন এবং রাইবোফ্লাবিন রয়েছে। দুধ শরীরে ক্যালশিয়াম, ভিটামিন-ডি এর যোগান দেয়। ১০০ গ্রাম দুধ থেকে ৪২ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। দুধে ভিটামিন সি থাকেনা তবে কার্বোহাইড্রেট কম পরিমাণে থাকে। নিরামিষভোজিদের জন্য দুধ প্রোটিনের প্রধান উস।অন্যদিকে কলায় ফাইবার থাকে যা শুধুমাএ শরীরে শক্তি যোগায় না বরং নানান রোগ থেকেও রক্ষা করে। প্রতি ১০০ গ্রাম কলায় ৮৯ ক্যালরি থাকে।
আরও পড়ুন: গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
কলা খেলে অনেকক্ষণ পেট ভরে থাকে। বিশেজ্ঞদের মতে, আলাদা আলাদা দুধ ও কল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। কিন্তু এই দুই খাদ্যবস্তু তারা একসঙ্গে খাওয়ার পরামর্শ দেননা। এমনকি দুধ ও কলা দিয়ে তৈরি শেকও তারা খেতে নিষেধ করে। দুধ ও কলা একসঙ্গে খেলে পাচনতন্ত্রের সমস্যা হয়, সাইনাসেও কুপ্রভাব পড়ে।
দীর্ঘ দিন দুধ কলা একসঙ্গে খেলে বমি, লুজ মোশন হয়ে থাকে। আয়ুর্বেদ মতে, ফল ও তরলের মিশ্রণ এড়িয়ে যাওয়া উচিত কারণ দুধ ও কলা শরীরে টক্সিফিকেশন উদ্দীপিত করে। এতে মস্তিষ্ক দুর্বল হতে শুরু করে।
কলা খেলে কি ঘুম ভালো হয়
কলা কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনের একটি ভালো উৎস। বাসার ডাইনিং টেবিল থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে পর্যন্ত কলা ঝুলতে খাকে। কলা কর্মশক্তি যোগায়, রক্তস্বল্পতা দূর করে এবং ব্যায়ামে শক্তি যোগায়। কলা খেলে পেট পরিষ্কার ও মন ভালো থাকে। এতে রাতে ঘুমও ভালো হয়। ঘুমের সময় পেশির টান একটি খুব পরিচিত সমস্যা।
কলাতে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকে। কলাতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম এই টান কমাতে সাহায্য করে এবং পেশিতে আরাম অনুভূত হয়। কলা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কলা খাওয়ার পর পানি খেলে কি হয়
কলা একটি ভারি খাবার। এটি হজম হতে অনেকক্ষণ সময় লাগে এবং পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কলা উপকারি হলেও কলা খাওয়ার পর পানি পান করলে পরিপাকতন্ত্রের অবনতি হয়। কলা খেয়ে পানি খেলে অ্যাসিডিটির সমস্যা হয়। কলা হলো একটি ফল আর ফল খাওয়ার সাথে সাথে কখনোই পানি পান করা উচিত নয়।
ফল খাওয়ার কমপক্ষে ৩০ মিনিট পর পানি পান করা উচিত। কলা খাওয়ার পর পানি পান করলে কলায় থাকা জৈব এসিড পানির সাথে বিক্রিয়া করে অন্ত্রের ক্ষতি সাধন করে। তাই ৩০ মিনিটের পূর্বে পানি পান করা উচিত নয়।
কলা কি ওজন কমাতে সাহায্য করে
কলা খেতে সবাই পছন্দ করে। সকালের নাস্তায় কর্নফ্লেক্স, চিয়াসিড আর ওটস এর সঙ্গে কলা খেতে ভালো লাগে। কলা খেলে ওজন বাড়ে নাকি কমে এটা নিয়ে অনেক দ্বন্দ আছে। কেউ কেউ মনে করে কলা খেলে ওজন কমে আবার কেউ কেউ মনে করে কলা খেলে ওজন বাড়ে । কলা পটাশিয়াম, ট্রিপটোফেন এবং শক্তিশালী কার্বসের একটা উৎস। তাই ওজন হ্রাসের পক্ষেও খুব ভালো কাজ করে।
তবে কলা ওজন কমাতে তখনই সহায়ক হবে যখন এটি আপনি সঠিকভাবে খাবেন। সঠিকভাবে না খেলে কোন কাজেই আসবেই না। যেকোন ধরণের কলার মধ্যে হলুদ কলা হলো সবচেয়ে উপকারি। কলাতে ফাইবার থাকে তাই পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে অন্যকিছু খেতে ইচ্ছা হয়না। এতে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এছাড়া হলুদ কলা শরীরে এনার্জি যোগায় এবং পাকস্থলিকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে।
নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা
শরীরে শক্তির ঘাটতি হলে সেই ঘাটতি পূরণের আদর্শ উপায় হলো নিয়মিত কলা খাওয়া। কলায় কোন ফ্যাট বা কোলেস্ট্রল থাকেনা। কলাকে এনার্জির পাওয়ার হাউজ বলা হয়। কলায় ভিটামিন বি৬ থাকে যা শরীরে লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ।
ম্যাঙ্গানিজ আমাদের ত্বককে কোলাজিন তৈরিতে সাহায্য করে। কলায় ভালো পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ পাওয়া যায়। কলায় পর্যাপ্ত পটাশিয়াম থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। নিয়মিত কলা খেলে ইমিউনিটি সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কারণ কলাতে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যেমন ফ্লাভোনয়েড। যা আমাদের শরীরের ফ্রি রেডিকেলকে কম করতে সাহায্য করে ফলে আমাদের শরীরের কোষগুলি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়না।
লেখকের মন্তব্য
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থেকে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি দিনে কয়টি কলা খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন। আরও তথ্য পেতে আমার ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। এই রকম আরও পোষ্ট পেতে অবশ্যই আপনার মতামত কমেন্ট বক্সে জানাবেন।
অভ্রটেকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url