সন্তান জন্মের পর আযান দেওয়ার নিয়ম
সন্তান জন্মের পর আযান দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেন না। চিন্তার কোন কারণ নেই আমার আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি সকল তথ্য জানতে পারবেন। এখানে সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের ক্ষেত্রে করণীয় কি সেই সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন আশা করি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
এখানে শুধুমাত্র সন্তান জন্মের পর আযান দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে লেখা নেই এর পাশাপাশি সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের ক্ষেত্রে করণীয়, সন্তান জন্মের পর কতদিন সহবাস করা নিষেধ সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ভূমিকা
একটি সুস্থ সবল সন্তান পিতা-মাতার কাছে নিয়ামত স্বরূপ। একজন মা ১০ মাস ১০ দিন একটি সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে। তীব্র প্রসব বেদনা সহ্য করে সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখায়। সন্তান জন্মের পূর্বে একজন মা যেমন তার খেয়াল রাখে তেমনি ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর এই দায়িত্ব আরও কয়েকগুন বেড়ে যায়। জন্মের পর একজন সন্তানকে আগলে রাখে তার পরিবার।
জন্মের পর শিশুর যত্ন
একটা সুস্থ সবল বাচ্চার জন্ম দিতে গিয়ে একজন মাকে কতই না কষ্ট সহ্য করতে হয়। কিন্তু বাচ্চার মুখ দেখা মাত্রই মা সে কষ্ট ভুলে যায়। একটা শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তাকে নিবিড় যত্নের মধ্যে রাখতে হয়। প্রসবের পর পাতলা নরম সুতি কাপড় দিয়ে বাচ্চাকে ভালোভাবে মুছে নিতে হবে। এরপর আরো একটা নরম পাতলা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে শিশুকে ভালো করে মুড়িয়ে মায়ের কোলে দিতে হবে।
আরও পড়ুন: গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
সন্তান জন্মের পর বেশ কিছুক্ষণ শিশুকে মায়ের বুকের সাথে জড়িয়ে রাখতে হবে এতে মায়ের বুক দিয়ে দুধ নামে। জন্মের 72 ঘন্টা পূর্বে শিশুকে কোনমতেই গোসল করানো যাবে না। এতে শিশুর ঠান্ডা লেগে যায়। নবজাতকের দুধ ছাড়া অন্য কিছু খাওয়ানো যাবে না। নবজাতকের ত্বকের বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। ঠিকমতো শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
নবজাতকের নাভিতে কোন কিছু লাগানো যাবে না। শিশুকে ভালোমতো দুধ খাওয়াতে হবে। কোন শিশু যদি টেনে দুধ না খেতে পারে তাহলে মায়ের দুধ চেপে বের করে খাওয়াতে হবে। শিশুকে বুকের সাথে জড়িয়ে রেখে গরম রাখতে হবে। এইভাবে জন্মের পর শিশুর যত্ন নিতে হবে।
সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের ক্ষেত্রে করণীয়
একটি সুস্থ সন্তান আল্লাহ তা’আলার নিয়ামত। তাই সন্তান জন্মের পর সর্বপ্রথম আল্লাহ তা’য়ালার প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে হবে। ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, ”সন্তান জন্মের সংবাদ পেলে সন্তানের জন্য কল্যাণ ও বরকতের দোয়া করা আবশ্যক সন্তান”।সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডান কানে আজান দিতে হবে। সন্তান জন্মের পর আযান দেওয়ার নিয়ম অনেকেই জানেনা।
সঠিক নিয়ম জেনে সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। সন্তান জন্মের সাত দিন পর শিশুর আকিকা দিতে হবে ও মাথার চুল কাটতে হবে। চুল কাটা হলে চুলের সমপরিমাণ রোপ্য সাদকা করা সুন্নাত। আকিকা করা একটি ইবাদত। পুত্র সন্তান হইলে দুইটি পশু সাদকা হিসেবে পেশ করতে হয় আর মেয়ে হলে একটিপশু সাদকা হিসেবে পেশ করতে হয়। তবে পশুর অবশ্যই চারপা হতে হবে এবং হালাল হতে হবে।
আরও পড়ুন: ব্যাথা মুক্ত নরমাল ডেলিভারির খরচ
সাধারণত সাদকা হিসেবে গরু, ভেড়া, ছাগল ইত্যাদি দিয়ে আকিকা করা হয়। আকিকা দেওয়ার মাধ্যমে শিশু বন্ধক মুক্ত হয় এবং মাতা পিতার জন্য সুপারিশ করার উপযুক্ত হয়। উপরোক্ত বিষয়গুলোই হলো সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের ক্ষেত্রে করণীয়।
সন্তান জন্মের পর আযান দেওয়ার নিয়ম
সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর ডান কানে আযান ও বাম কানে ইকামত দেওয়া সুন্নাত। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে ছেলে মেয়ে উভয়ের কানে কি আজান দেওয়া যাবে। ইসলামের শরিয়া মোতাবেক শিশু ছেলে হোক বা মেয়ের জন্মের পর অবশ্যই তার ডান কানে আযান ও বাম কানে ইকামত দিতে হবে। এটি একাধিক হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
জন্মের পর নবজাতকের ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত দেওয়ার অন্যতম কারণ হলো শিশুকে শয়তানের প্ররোচনা থেকে দূরে রাখা এবং আল্লাহর নিকটবর্তী করার। শিশুর কানে আজান ও ইকামত দেওয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহ ত ‘আলার পবিত্র নাম, তাওহীদ ও রিসালাতের ঘোষণা পৌঁছে দেওয়া হয়। ফলে শিশুর হৃদয় ও মস্তিষ্কে ঈমান ছড়িয়ে পড়ে এবং শয়তানের প্ররোচনা থেকে মুক্ত থাকে। খারাপ জ্বিন শয়তান তাদের আক্রমণ করতে পারেনা।
আবার অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে মেয়েরা কি শিশুর কানে আজান দিতে পারে? তাহলে উত্তরে বলব অবশ্যই পারবে পুরুষ মানুষ যদি উপস্থিত না থাকে তাহলে নারীরা শিশুর কানে আজান দিতে পারবে। তাই সন্তান জন্মের পর আযান দেওয়ার নিয়ম ভালোভাবে জেনে সে অনুযায়ী আমল করতে হবে।
সন্তান জন্মের পর দোয়া
সন্তান জন্মের পর অবশ্যই আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। সন্তানের কল্যাণের জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতে হবে। সন্তান যাতে সুস্থ থাকে, একজন ঈমানদার ব্যক্তি হতে পারে, সকলের কল্যাণ করতে পারে, শয়তানের প্ররোচনায় যাতে জড়িয়ে না পড়ে সেজন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়া করতে হবে। সন্তান জন্মের পর দোয়া নিম্নরূপ-
উচ্চারণ: বারাকাল্লাহু লাকা ফিল মাউহুবি লাকা, ওয়া শাকারতাল ওয়াহিবা, ওয়া বালাগা আশাদ্দাহু, ওয়া বিররাহু।
অর্থ: আল্লাহ আপনাকে যা দান করেছেন তাতে আপনার জন্য বরকত দিন, আপনি দানকারীর কৃতজ্ঞতা আদায় করুন, সন্তানটি পরিণতবয়স লাভ করুক এবং আপনি তার সদাচার লাভ করুন।
সন্তান জন্মের পর আযান দেওয়ার নিয়ম জেনে আমাদের শিশুর ডান কানে আযান ও বাম কানে ইকামত দিতে হবে।
সন্তান জন্মের পর কতদিন সহবাস করা নিষেধ
সন্তান জন্মের পর কতদিন সহবাস করা নিষেধ এই নিয়ে অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন জাগে। তবে আনন্দময় সহবাসের জন্য সন্তান জন্মদানের পর অবশ্যই কিছুটা সময় নেওয়া উচিত। তা না হলে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ছয় সপ্তাহ পর থেকে নতুন পিতা-মাতা তাদের দাম্পত্য জীবন শুরু করতে পারেন।
তবে কেউ চাইলে চার সপ্তাহ পর থেকে সহবাস করতে পারেন তবে এতে ঝুঁকি থাকতে পারে। তাই অনেকে আট সপ্তাহ পর থেকে সহবাস শুরু করেন। ডেলিভারির তিন মাস পর্যন্ত সহবাস করলে নানা সমস্যা সম্মুখীন হতে হয়। তবে ছয় মাসের মধ্যে সমস্যা অনেকটা কমে যায়। ডেলিভারির পর আমাদের যোনিপথ অনেকটা শুষ্ক হয়ে যায়। এই সময় সহবাস করলে তীব্র ব্যথা হয়।
হরমোনের কারণে অনেক সময় ত্বক পাতলা হয়ে যায় এতে যোনিপথ ছিরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই নির্দিষ্ট সময় বিরতি রেখে সহবাস করা উচিত।
সন্তান জন্মের পর মায়ের খাবার
বাচ্চা যতদিন তার মায়ের বুকের দুধ খাবে ততদিন মাকে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। মা হওয়ার পর অনেকের স্বাস্থ্য বেড়ে যায়। তাই শারীরিক পরিশ্রম এবং কম খাবার খাওয়ার মাধ্যমে অনেকেই পূর্বের অবস্থায় ফিরতে চাই কিন্তু এটা করা মোটেও ঠিক না। বাচ্চা হওয়ার পর মায়েদের পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। সন্তান জন্মের পর মায়ের খাবার এর দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: শিশুর জ্বর হলে সিরাপ নাকি সাপোজিটার
মা যদি ঠিক মত খাবার না খায় তাহলে বাচ্চা ঠিকমতো দুধ পাবে না। তাই মাকে ঠিক মত খাবার খেতে হবে। প্রতিদিন দুইটা ডিম, এক গ্লাস দুধ, সবুজ-শাকসবজি, পরিমাণ মতো মাছ, মাংস খেতে হবে। এছাড়াও ঘি, বাদাম, ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল খেতে হবে। প্রসূতি মাকে অবশ্যই আয়োডিনযুক্ত লবণ খেতে হবে। সন্তান জন্মের পর সন্তানের পাশাপাশি মায়ের ও যত্ন নিতে হবে।
লেখক এর মন্তব্য
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থেকে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি সন্তান জন্মের পর আযান দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন। আরো তথ্য পেতে আমার ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। এরকম আরো পোস্ট পেতে অবশ্যই আপনার মতামত কমেন্ট বক্সে জানাবেন।
অভ্রটেকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url